শিশুর অ্যাডিনয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধি ও শ্বাসের সমস্যা

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের সব কোষে অক্সিজেন প্রবাহ জরুরি, যা পাই চারপাশের বাতাস থেকে। এই অক্সিজেন শ্বাসনালি হয়ে ফুসফুস অতিক্রম করে রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্তের মাধ্যমে প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। নাক থেকে শুরু করে শ্বাসনালির কোথাও বাতাসের এই প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হয়। ফলে হা করে শ্বাস নেয়, নাকে ঘড় ঘড় শব্দ হয়, বিশেষ করে ঘুমের সময়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নাকের ভেতরের ঝিল্লিগুলো ফুলে গেলে, নাকের ভেতরের পর্দা বা দেয়াল জন্মগতভাবে বাঁকা হলে এ রকম সমস্যা হয়ে থাকে। তবে বাচ্চাদের এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি নাক বন্ধ সমস্যার প্রধান কারণ হলো শ্বাসনালির একদম ওপরের অংশে, নাকের পেছনের দরজার ঠিক ওপরে থাকা অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া।

জন্মের পর এই গ্রন্থির বৃদ্ধি শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তা সাত বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

অ্যাডিনয়েড বাড়ার কারণ

ঊর্ধ্ব শ্বাসনালির ঘন ঘন সংক্রমণ, বিশেষ করে অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ, পরোক্ষ ধূমপান, অ্যালার্জি, বাচ্চার যদি বার বার বমি হওয়ার
প্রবণতা থাকে।

জটিলতা

বারবার কানে সংক্রমণ, ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, মুখের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, কানের ভেতর পানি জমে যাওয়া, শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়া।

কীভাবে ঠেকানো যায়

বাচ্চাদের মুখ, নাক ও শ্বাসনালির ওপরের অংশের ঘন ঘন সংক্রমণ ঠেকাতে, যেমন নিয়মিত মাস্ক পরা; বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত করা; বাজার থেকে কেনা খাবার, পচা, বাসি খাবার না খাওয়ানো; খাবার, পানি, দুধ—কোনো কিছুই বোতলে না খাওয়ানো; সকাল ও রাতে দাঁত ব্রাশ করে মুখ পরিষ্কার রাখা; কিছুক্ষণ পরপর অল্প অল্প হালকা লবণ মিশ্রিত গরম পানি, লেবু, আদা চা খাওয়ানো; মধু, লেবু, টমেটো কিংবা আপেলের রস খাওয়ানো; সার্বিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা; নিয়মিত ভিটামিন এ–সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

গলার এক্সরে করে রোগ শনাক্ত করা যায়। দরকার হলে নাক ও শ্বাসনালির ওপরের অংশের এন্ডোস্কপি লাগতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক, নাকের স্টেরয়েড নাসাল স্প্রে ও অন্যান্য চিকিৎসা নেওয়া। তবে অ্যাডিনয়েড অনেক বড় হয়ে গেলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

  • অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা, শিশুবিশেষজ্ঞ