রিকেটস রোগ হলো বাড়ন্ত শিশুর হাড়ের গঠনগত একটি ত্রুটি। এর ফলে শিশুর হাড় বেঁকে যায়, হাড়ে ব্যথা হয়, পায়ের বিকৃতি দেখা যায়; এমনকি হাড় নরম হয়ে ভেঙেও যেতে পারে। এই রোগ হলে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিও বাধাপ্রাপ্ত হয়।
কেন রিকেটস রোগ হয়
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডির অভাব এই রোগের মূল কারণ। পাশাপাশি ফসফরাস ও সূর্যালোকের অভাব, খাবারের ভিটামিন ডির ঘাটতি, খাদ্যজনিত ভিটামিন ডি শোষণ হ্রাস পাওয়া এই রোগকে ত্বরান্বিত করে। লিভার ও কিডনির রোগের কারণে এবং বিভিন্ন ওষুধ যেমন—খিঁচুনির ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শিশুরা রিকেটস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
লক্ষণ ও জটিলতা
l মাথার খুলির হাড় নরম হয়ে যাওয়া।
l খুলির আকৃতি চারকোনা বাক্সের মতো হওয়া।
l দুধদাঁত উঠতে দেরি হওয়া, দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া।
l বুকের পাঁজরের হাড় বুকের সামনে বৃদ্ধি পাওয়া।
l বুকের খাঁচা আবার পরিবর্তিত হওয়া।
l কবজি ও গোড়ালির হাড় বেড়ে যাওয়া।
l হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পা সামনের দিকে বেঁকে যাওয়া।
l হাঁটুর কাছ থেকে দুই পা দুই দিকে বেঁকে যাওয়া।
l পা ধনুকের মতো বেঁকে যাওয়া।
l দুই পা একই সঙ্গে একই দিকে বেঁকে যাওয়া।
l মাংসপেশি শুকিয়ে গিয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়া।
l িটটানিতে আক্রান্ত হওয়া।
এই রোগে আক্রান্ত হলে শিশুর শ্বাসনালির প্রদাহ, ব্রংকাইটিস নিউমোনিয়া, আয়রন ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতা, শারীরিক উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া, টিটানি রোগে আক্রান্ত হওয়া, হাড় নরম হয়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়া প্রভৃতি জটিলতা হতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
শিশুকে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। বিভিন্ন রকম সবজি যেমন ঢ্যাঁড়স, কুমড়াশাক ও কাঁটাওয়ালা ছোট মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দুধ অথবা দুধ জাতীয় খাবার দৈনিক ৬০০ মিলিলিটার খাওয়াতে পারলে ক্যালসিয়ামেরদৈনিক চাহিদা পুরোপুরি মেটানো যাবে। ভিটামিন ডি পেতে শিশুকে নিয়মিত সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে রোদে ৩০ মিনিট সময় রাখতে হবে। এর সঙ্গে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম ব্যবহারে ৭৫ ভাগ শিশুই সুস্থ হয়ে যায়। তবে বয়স ছয় বছরের বেশি হলে এবং পা বেঁকে যাওয়ার পরিমাণ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি হলে ব্রেস চিকিৎসা, আবার কখনো কখনো শল্যচিকিৎসা অর্থাৎ অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে।
প্রসূতি মাকে ভিটামিন ডি দিতে হবে। শিশুদের দুধ ও খাবারে ভিটামিন ডি যুক্ত করতে হবে। স্বল্প ওজনের অপরিণত শিশুর জন্মের পর দুই সপ্তাহ থেকে ভিটামিন ডি দিতে হবে।
ডা. ইমনুল ইসলাম, অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়; চেম্বার—আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর, ঢাকা