ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পা কেন বেশি স্থূল ও শক্তিশালী
একই ওজনের একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মধ্যে খেয়াল করলেই দেখা যাবে, দুজনের পায়ের গঠনে কিছুটা ভিন্নতা আছে। ছেলেটির তুলনায় মেয়েটির পা অনেক সময় বেশি স্থূল। কারণ না জেনেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মিম দেখা যায়। এসব দেখে অনেক নারী হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করেন।
নারীদের পা তুলনামূলকভাবে স্থূল হওয়ার পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক ও শারীরবৃত্তীয় কারণ আছে। নিচে সহজ ভাষায় সেগুলো ব্যাখ্যা করা হলো।
হরমোনজনিত পার্থক্য
ইস্ট্রোজেন নামক একটি হরমোন আছে, যা সাধারণত নারীদের দেহে পাওয়া যায়। এই হরমোন শরীরে, বিশেষ করে ঊরু, নিতম্ব ও পায়ে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। এই ফ্যাট নারীকে প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও সুরক্ষা দেয়। গর্ভধারণের সময়ে শরীরের এসব অংশে চর্বি দরকার পড়ে।
চর্বির বণ্টন
ছেলেদের শরীরে চর্বি সাধারণত পেটের চারপাশে জমে, যা অভ্যন্তরীণ অঙ্গের আশপাশে থাকে। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে চর্বি জমে ত্বকের নিচে, বিশেষ করে ঊরু ও পায়ে। এ জন্য তাঁদের পা দেখতে তুলনামূলক স্থূল লাগে।
বংশগত প্রভাব
অনেক ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও মেয়েদের নির্দিষ্ট অংশে বেশি ফ্যাট জমে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় নারীদের ক্ষেত্রে ঊরুতে ফ্যাট জমার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
শরীরের গঠনগত পার্থক্য
নারীদের হাড় ও পেশির গঠন ছেলেদের চেয়ে আলাদা। নারীদের পেলভিস চওড়া থাকে। যে কারণে পা ও নিতম্বকে দেখায় প্রশস্ত। তাঁদের পেশি তুলনামূলকভাবে ছেলেদের মতো শক্ত না হওয়ায় ফ্যাট বেশি লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া বডি টাইপ বলেও একটি কথা আছে। একেক নারীর বডি টাইপ একেক রকম, সে অনুযায়ী একেকজনের কোমর হয় প্রশস্ত আর কাঁধ সরু, আবার অনেকের কাঁধ চওড়া ও কোমর হয় সরু।
মাতৃত্বকালীন পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পায়ে ও নিতম্বে অতিরিক্ত ফ্যাট জমে। অনেক সময় সন্তান প্রসবের পরেও এগুলো কমে না। কেউ কেউ আবার মা হওয়ার পর পায়ের চর্বি নিয়ে খুব একটা সচেতন থাকেন না। ফলে পা তুলনামূলক স্থূল দেখায়।
পায়ে ফ্যাট বা চর্বি থাকা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে খারাপ নয়; বরং এটি প্রাকৃতিক ও প্রজননে সহায়ক একধরনের বৈশিষ্ট্য। তবে অতিরিক্ত ফ্যাট জমে গেলে স্থূলতা বা হরমোনাল সমস্যা তৈরি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ।
ফওজিয়া আহমেদ, পুষ্টিবিদ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা