কারপাল টানেল সিনড্রোম

কবজিতে ব্যথা, অবশ ভাব, ঝিঁঝিঁ অনুভূতি ও দুর্বলতা দেখা দেয়প্রতীকী ছবি

কারপাল টানেল সিনড্রোম বা সিটিএস মূলত কবজির একটি কম্প্রেসিভ নিউরোপ্যাথি বা স্নায়ুজনিত সমস্যা। এটি হলে কবজিতে ব্যথা, অবশ ভাব, ঝিঁঝিঁ অনুভূতি ও দুর্বলতা দেখা দেয়।

‘কারপাল টানেল’ হাতের তালুর মধ্যে থাকা একটি সরু পথ। কবজির মাঝখানে অবস্থিত এ টানেল বা সুড়ঙ্গের মধ্যে কবজি ভাঁজ করতে ব্যবহৃত পেশিগুলোর টেন্ডন বা রগ ও কিছু স্নায়ু চলে গেছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু হলো মিডিয়ান নার্ভ। কবজির মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গে মিডিয়ান নার্ভের ওপর চাপ পড়লে কারপাল টানেল সিনড্রোম হয়ে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের তুলনায় নারীর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা তিন গুণ। সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়।

কেন ও কখন হয়

  • ক্রমাগত হাতের কবজির ওপর চাপ পড়লে এ সমস্যা হতে পারে, যেমন দীর্ঘক্ষণ কি-বোর্ডে টাইপিং করা। বারবার ও দীর্ঘ সময় মাউস ব্যবহারেও কবজির টানেলের ওপর চাপ পড়ে।

  • ক্রমাগত ও বারবার একই কাজ করলে রিপিটিটিভ স্ট্রেস পড়ে ও ইনজুরি হয়।

  • কবজির ভেতরে টিউমার হলে কারপাল টানেল সিনড্রোম দেখা দিতে পারে।

  • ট্রমা অথবা কবজির ফ্র্যাকচার পরবর্তী সময়ে দেখা দিতে পারে।

  • কিছু রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের এটি হতে পারে।

  • গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর দেখা দিতে পারে।

উপসর্গ

  • হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও অন্য আঙুলগুলোয় অসাড়তা বা ঝিঁঝিঁ অনুভূতি।

  • কবজি বা হাতে ব্যথা, যা কনুই পর্যন্ত হতে পারে।

  • কোনো বস্তু দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে অসুবিধা।

  • এক হাত বা উভয় হাতের পেশির দুর্বলতা।

  • ভারী বস্তু বহন করতে না পারা।

  • উভয় হাত সমন্বয় করতে বাধার সৃষ্টি হওয়া।

চিকিৎসা

ব্যথা নিয়ন্ত্রণে কিছু ব্যথানাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে যথাযথ ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

  • প্রথমত, কবজিকে স্থিরতা প্রদানে স্প্লিন্ট দেওয়া হয়ে থাকে। এটি নার্ভের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমাতে বেশ কার্যকর।

  • আলট্রাসাউন্ড, কোল্ড থেরাপির পাশাপাশি ব্যথামুক্তির জন্য অত্যাধুনিক শকওয়েভ থেরাপি দেওয়া হয়।

  • কবজি ও হাতের তালুর সফট টিস্যু মোবিলাইজেশন করা হয়।

  • বিশেষ কিছু স্ট্রেচিং বা নার্ভ গ্লাইডিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে ব্যথা কমানো হয়।

  • কবজির পেশিগুলোর শক্তি ও গতিবৃদ্ধির থেরাপিউটিক এক্সারসাইজে ব্যথা ও অসাড়তা থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়।

বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের উপদেশ মেনে ও জীবনযাত্রার মান ঠিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমে এ রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

  • মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, কনসালট্যান্ট (ফিজিওথেরাপি), চৌধুরী ফিজিওথেরাপি সেন্টার, মিরপুর ১০, ঢাকা