গর্ভাবস্থায় হাঁপানি বাড়লে কী করণীয়
যাঁদের আগে থেকেই হাঁপানি বা অ্যাজমা আছে, তাঁদের জন্য গর্ভকালীন সময়টা বেশ উদ্বেগের। দেশে শীত পড়েছে। এ সময় হাঁপানি আছে এমন অন্তঃসত্ত্বাদের সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় হাঁপানির উপসর্গ বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট, বুক ধরা, কাশি বা শোঁ শোঁ শব্দের সমস্যা তীব্র হয়। এতে মা ও শিশুর কী ঝুঁকি থাকে এবং কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, তা জেনে রাখা উচিত।
গর্ভাবস্থায় হাঁপানি কেন বাড়তে পারে
গর্ভাবস্থায় শরীরে নানা হরমোনগত ও শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। হরমোনের পরিবর্তন (বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন) শ্বাসনালির সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে। বর্ধিত জরায়ু ফুসফুসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। নাক বন্ধ থাকা, রিফ্লাক্স (গ্যাস্ট্রিক) ও সংক্রমণ হাঁপানি বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
অনেকে গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর মনে করে হাঁপানির ওষুধ বন্ধ করে দেন বা অনিয়মিত ওষুধ খান। এটাও বড় কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালে এক-তৃতীয়াংশ নারীর হাঁপানি বাড়ে, এক-তৃতীয়াংশের কমে এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশের একই থাকে।
মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি কী
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শুধু মায়ের নয়, শিশুরও ক্ষতি হতে পারে। মায়ের ক্ষেত্রে তীব্র শ্বাসকষ্ট, বারবার হাসপাতালে ভর্তি ও প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়ার (গর্ভাবস্থার একটি গুরুতর জটিলতা) ঝুঁকি তৈরি হয়। গর্ভস্থ শিশুর ক্ষেত্রে কম ওজন নিয়ে জন্ম, সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া (প্রিম্যাচিউর) ও গর্ভের মধ্যে অক্সিজেনের ঘাটতির মতো সমস্যা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় হাঁপানির ওষুধ কি নিরাপদ
এ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা কাজ করে। হাঁপানি একটি ক্রনিক রোগ এবং এর চিকিৎসা হুট করে বন্ধ করা যায় না। যাঁদের আগে থেকে হাঁপানি আছে ও নিয়মিত ইনহেলার বা নানা ওষুধ সেবন করতে হয়, তাঁরা সন্তান ধারণ করার পর নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখলে ভালো। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার ও প্রয়োজনীয় হাঁপানির বাকি সব ওষুধ ব্যবহার করা শিশুর জন্য অনেকাংশেই নিরাপদ।
হাঁপানি বাড়লে করণীয়
নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপ।
হাঁপানির ট্রিগার এড়িয়ে চলা (ধুলা, ধোঁয়া, ঠান্ডা, অ্যালার্জেন)।
ইনহেলার সঠিক নিয়মে ব্যবহার।
শ্বাসকষ্ট বাড়লে দেরি না করে হাসপাতালে যোগাযোগ।
ধূমপান ও পরোক্ষ ধূমপান সম্পূর্ণ পরিহার।
হাঁপানি রোগীর সন্তান ধারণ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে না থাকাটা সমস্যাজনক। এ থেকে নানা জটিলতা হতে পারে। তবে সচেতনতা, নিয়মিত চিকিৎসা ও সঠিক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে মা ও শিশু—দুজনই সুস্থ থাকতে পারে।