পুরুষেরও হতে পারে প্রস্রাবে সংক্রমণ

কিডনি, এক জোড়া মূত্রনালি, মূত্রথলি নিয়ে মূত্রতন্ত্র বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট। মূত্রতন্ত্রের যেকোনো স্থানে সংক্রমণ হলেই তাকে প্রস্রাবে সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলে। পুরুষদের প্রস্রাবে সাধারণত সংক্রমণ কম হয়। তবে হয়েছে কি না, বুঝতে লক্ষণগুলো জানা থাকা দরকার।

গ্রাফিকস: প্রথম আলো

লক্ষণ

বারবার প্রস্রাব হওয়া। প্রস্রাবের সময় বা প্রস্রাবের পর প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়া। জ্বর, প্রস্রাবের রং লালচে বা অস্বাভাবিক হওয়া, দুর্গন্ধ ইত্যাদি। সংক্রমণের মাত্রা বেশি হলে এর সঙ্গে বমি ও তলপেটে ব্যথা থাকতে পারে।

পুরুষদের প্রস্রাবে সংক্রমণ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। পুরুষদের যদি কখনো সংক্রমণ হয়, এমনকি প্রথমবার হলেও গুরুত্বের সঙ্গে কারণ খুঁজে বের করতে হবে। না করলে বারবার সংক্রমণ হবে, রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তা গুরুতর হতে পারে।

উপসর্গ দেখামাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি কিছু টেস্ট করা জরুরি। যেমন রক্তে সংক্রমণের মাত্রা, প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা, ইউরিন কালচার টেস্ট, আলট্রাসনোগ্রাম ও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ। যাঁদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড়, তাঁদের পিএসএ (প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) টেস্ট করতে হতে পারে।

বয়স্ক পুরুষ রোগীর প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হলে প্রস্রাব পুরোপুরি বের হতে পারে না। বেশ খানিকটা প্রস্রাব মূত্রথলিতে থেকে যায়। তা থেকে বারবার সংক্রমণ হতে পারে। মূত্রথলিতে প্রস্রাব জমে থাকার সমস্যা যত তাড়াতাড়ি ঠিক করা যায়, ততই ভালো।

প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি পেলে এর আকার ছোট করার জন্য কিছু ওষুধ আছে। কত বড়, তার ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় ওষুধ। সাধারণত ৪০ মিলিলিটারের কম হলে ট্যামসুলোসিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। ৪০ মিলিলিটারের বেশি হলে দেওয়া হয় ট্যামসুলোসিন ও ডুটাস্টেরাইড। এ ছাড়া আরও কিছু ওষুধ দেওয়া হয় প্রস্রাবের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য।

এ ছাড়া পুরুষের প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে কোনো যৌনবাহিত রোগ আছে কি না, দেখা জরুরি। ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া বা পূর্ববর্তী এই রোগের কারণে মূত্রনালিতে প্রদাহ হয়ে প্রস্রাবের প্রবাহ কমে যেতে পারে, বারবার সংক্রমণ হতে পারে।

যা করতে হবে

প্রচুর পানি পান করতে হবে। জ্বালাপোড়া কমানোর ওষুধের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে ১৪ দিন পর্যন্ত ওষুধ লাগতে পারে। সংক্রমণের মাত্রা বেশি হলে এবং বমি ও পেটব্যথা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি করে ইনজেকশন দিতে হতে পারে।

প্রোস্টেট গ্রন্থি বেশি বড় হলে সংক্রমণ সারার পর অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে সংক্রমণ বেশি হয়, জটিল আকার ধারণ করে। তাই এ ব্যাপারেও যত্নবান হওয়া জরুরি।

লেখক: সহযোগী কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা