শান্ত রাখতে অনেক সময় মা-বাবা শিশুর মুখে চুষনি দিয়ে রাখেন।
ছবি: পেক্সেলস

প্যাসিফায়ার বা চুষনি হলো রাবার, প্লাস্টিক বা সিলিকন দিয়ে স্তনবৃন্তের আদলে তৈরি একটি বস্তু। শান্ত রাখতে অনেক সময় মা-বাবা শিশুর মুখে চুষনি দিয়ে রাখেন। এটি শিশুদের আঙুল চোষার বদভ্যাস থেকে বিরত রাখতেও সাহায্য করে। শোয়া বা ঘুমানোর সময় যাদের মুখে চুষনি থাকে, তাদের মধ্যে এসআইডিএস (সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম) বা ‘আচমকা শিশুর মৃত্যু উপসর্গে’ আক্রান্ত হওয়ার হার কম বলে কেউ কেউ বলে থাকেন। যদিও এর সপক্ষে এখনো গবেষণালব্ধ ফলাফল তেমন পাওয়া যায়নি, বরং চুষনি ব্যবহারের বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, চুষনি ব্যবহারে শিশুর ‘সাকিং রিফ্লেক্স’ বা দুধ খাওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছা কমে যায়। অথচ এটা মায়ের বুক থেকে দুধ আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তখন শিশু ‘নিপল কনফিউশনে’ ভোগে। ফলে তারা প্রয়োজনীয় পরিমাণে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হয়। আর শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা ও বুদ্ধি বিকাশের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন

শিশু কিচ্ছু খেতে চায় না? এই বুদ্ধিগুলো জেনে রাখুন

এমনকি কখনো কখনো শিশু চুষনিতে আসক্তও হয়ে পড়ে, যা তাদের পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখে। ফলে শিশুর বয়স অনুযায়ী ওজন বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
চুষনি বা প্যাসিফায়ার ব্যবহারে শিশুদের কানে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দেখা যায়, এসব শিশু ওটিটিস মিডিয়া নামে কানের একধরনের অসুখে বেশি ভোগে। তাদের মধ্যে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যাও দেখা যায়। বেশি সময় চুষনি বা প্যাসিফায়ার ব্যবহারের কারণে দেখা যায়, তাদের দাঁতের গঠন ও সারিবদ্ধভাবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া দাঁতের দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন সমস্যা, যেমন দাঁত ক্ষয়ে ক্যাভিটিস হতে পারে, দাঁত ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে।

শিশুরা কথা বলা শেখার জন্য বয়স অনুযায়ী যেসব কাজ করে, চুষনি ব্যবহারের কারণে সেগুলো কমে যায়
ছবি: পেক্সেলস


শিশুরা কথা বলা শেখার জন্য বয়স অনুযায়ী যেসব কাজ করে, চুষনি ব্যবহারের কারণে সেগুলো কমে যায়। ফলে শিশুদের কথা বলা শিখতে দেরি হতে পারে। তাদের সামাজিকীকরণও বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে এসব ক্ষেত্রে।
আর ব্যবহৃত চুষনি সঠিকভাবে পরিষ্কার না করে শিশু বারবার মুখে দেওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়াজনিত মুখগহ্বর ও অন্ত্র ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কম নয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ‘ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউট অ্যাক্ট ২০১৩’-তে প্যাসিফায়ার বা চুষনি নবজাতকের স্বাস্থ্যের জন্য কেন ক্ষতিকর, সে-সংক্রান্ত তথ্য অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে।
চুষনির অভ্যাস না করে বরং শিশুকে শান্ত রাখতে সময় দিতে হবে। আদর, ভালোবাসা ও খেলাধুলার মাধ্যমে মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে তাকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

আরও পড়ুন

শিশুর ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে, কীভাবে বুঝবেন