বাংলাদেশে ১২ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, সিওপিডি নিয়ে তাই সচেতন হোন

ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি ফুসফুসের একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর নভেম্বরের তৃতীয় বুধবার বিশ্বব্যাপী সিওপিডি দিবস পালিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্বাসই জীবন, ব্যবস্থা নিন এখনই।’

সিওপিডি হলে শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যা প্রতিনিয়ত অবনতির দিকে যায়। এ রোগ পুরো নিরাময়যোগ্য নয়। তবে চিকিৎসা করলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিশ্বে সিওপিডির অবস্থান তৃতীয়। বিশ্বজুড়ে ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে ১২ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত।

কাদের হয়

৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ধূমপানই এ রোগের জন্য দায়ী। বায়ুদূষণও সিওপিডির বড় কারণ। পরিবেশে ধোঁয়া ও রাসায়নিকের উপস্থিতিতে সিওপিডির ঝুঁকি বাড়ে। তাই যাঁরা মাটির চুলায় রান্না করেন এবং চুলার ধোঁয়া সরাসরি যাঁদের শ্বাসনালিতে ঢোকে, তাঁরাও থাকেন ঝুঁকিতে। জিনগত কারণও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ রোগের জন্য দায়ী। শৈশবে প্রায়ই শ্বাসনালির সংক্রমণ হয়ে থাকলে পরবর্তী সময়ে সিওপিডি হতে পারে।

লক্ষণ

  • দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট। দীর্ঘমেয়াদি কাশি।

  • প্রায়ই জ্বর আসা। শারীরিক দুর্বলতা।

  • গলায় দীর্ঘদিন ধরে অস্বস্তি অনুভব করা। দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা।

চিকিৎসা

প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে রোগের গতিকে শ্লথ করা সম্ভব। চিকিৎসার জন্য ইনহেলার এবং মুখে সেবন করার ওষুধ প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতেও হতে পারে। এ ছাড়া সিওপিডির চিকিৎসার অংশ হিসেবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে।

প্রতিরোধ

যেহেতু রোগটি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়, তাই প্রতিরোধে সচেতন হওয়াই শ্রেয়। সবাইকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে হবে। জনসম্মুখে ধূমপানে দণ্ড কার্যকর করতে হবে। কারণ, একজনের সিগারেটের ধোঁয়া অন্যজনের ফুসফুসের রোগের জন্য দায়ী। সরকারিভাবে সিগারেট বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাও প্রয়োজন। এ ছাড়া এমন মাটির চুলার ব্যবস্থা করা উচিত, যা থেকে নির্গত ধোঁয়া চিমনির সাহায্যে অনেক ওপরে ছড়িয়ে যায় (যেমন-বন্ধু চুলা)। বারবার জীবাণুর সংক্রমণ হলে ছোটবেলাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সিওপিডির কারণে হৃদ্‌পিণ্ড থেকে শুরু করে সব অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক ক্ষতি তাঁর পরিবারকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। তাই সিওপিডি থেকে বাঁচতে ব্যক্তি থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এ রোগের প্রতিরোধে অংশগ্রহণের বিকল্প নেই।

  • অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন সরকার, সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ সোসাইটি (বিপস)