সারকোপেনিয়া বা মাংসপেশির ক্ষয়রোগ কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা জানুন

সারকোপেনিয়া বা মাংসপেশির ক্ষয়রোগ হলো বয়সের কারণে ধীরে ধীরে পেশির ভর, শক্তি ও কার্যক্ষমতা কমতে থাকা। সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের পর থেকে ধীরে ধীরে পেশির ক্ষয় শুরু হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্রতা বাড়ে।

সারকোপেনিয়া বা মাংসপেশির ক্ষয়রোগ হলো বয়সের কারণে ধীরে ধীরে পেশির ভর, শক্তি ও কার্যক্ষমতা কমতে থাকাছবি: পেক্সেলস

কেন হয়

সারকোপেনিয়ার প্রধান কারণ হলো বয়স বৃদ্ধি বা বার্ধক্য। তবে আরও কিছু বিষয় এ জন্য দায়ী। এর মধ্যে একটি শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা অর্থাৎ নিয়মিত ব্যায়াম না করা বা সক্রিয় না থাকা। পুষ্টিহীনতা, বিশেষ করে প্রোটিন ও ভিটামিন-ডি ঘাটতি।

হরমোনজনিত পরিবর্তন যেমন টেস্টোস্টেরন, গ্রোথ হরমোন, ইনসুলিন ইত্যাদির হ্রাস। ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, কিডনির বা ফুসফুসের রোগ। স্টেরয়েড বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ থাকলেও এ রোগ হয়।

কীভাবে বুঝবেন

সারকোপেনিয়া ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। এর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো—

  • পেশিশক্তি কমে যাওয়া।

  • শরীরের ওজন কমে যাওয়া, বিশেষ করে মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া।

  • হাঁটার গতি ধীর হয়ে যাওয়া।

  • অল্পতেই ক্লান্তি।

  • দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা যেমন—চেয়ার থেকে উঠতে, সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হওয়া।

  • ভারসাম্য হারানো বা বারবার পড়ে যাওয়া।

আরও পড়ুন

সারকোপেনিয়ার চিকিৎসা

সারকোপেনিয়ার কোনো একক ওষুধ নেই। তবে জীবনযাত্রা ও চিকিৎসার সমন্বয়ে নিয়ন্ত্রণ এবং পেশি ক্ষয় কমানো সম্ভব। এর মধ্যে প্রথমে আছে ব্যায়াম। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর স্ট্রেংথ ট্রেনিং ও রেজিস্ট্যান্স বাধা প্রদানকারী ব্যায়াম।

এ ছাড়া ওয়েট ট্রেনিং, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড এক্সারসাইজ, স্কোয়াট, লাঞ্জ, পুশ-আপ, হাঁটা ও হালকা দৌড় ইত্যাদি করতে পারেন।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পুষ্টি। প্রোটিনসমৃদ্ধ যেমন মাছ, মুরগি, ডিম, ডাল, দুধজাত খাবার খেতে হবে। ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (মাছের তেল, বাদাম) ও পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।

 ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোন থেরাপি বেশ কাজের। মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন থেরাপির পাশাপাশি বিভিন্ন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করতে পারেন।

নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে। ঘুমাতে হবে পর্যাপ্ত। নিয়মিত শরীরচর্চা ও সক্রিয় জীবন যাপন করতে হবে।

আরও পড়ুন

প্রতিরোধে করণীয়

  • বয়স ৪০ পার হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করা।

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়া (১-১.২ গ্রাম/কেজি ওজন অনুযায়ী)।

  • হাড় ও পেশি শক্ত রাখতে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম নিশ্চিত করা।

  • দীর্ঘস্থায়ী রোগ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

আরও পড়ুন