অন্যদের তুষ্ট করার অতিপ্রবণতায় ভুগছেন? জেনে নিন মুক্তির উপায়
অন্যকে খুশি করতে গিয়ে বা তুষ্ট রাখতে গিয়ে অনেক সময়ই আমরা নিজেকে অবমূল্যায়ন করি। নিজের প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলা করে আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দিয়ে ফেলি। তাই প্রয়োজনে কখনো কখনো ‘না’ বলতে শিখুন, অন্যকে তুষ্ট করতেই হবে, এমন ধারণা ভুলে যান।
আমরা বেশির ভাগ মানুষ পরিবার, বন্ধুচক্র কিংবা কর্মক্ষেত্রে অন্যকে তুষ্ট রাখার ব্যাপারে বেশ তৎপর। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, অন্যকে খুশি রাখতে গিয়ে আমরা বেশি বেশি ‘সম্মতি’ দিয়ে ফেলি, যা মূলত পরার্থপরতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এই অধিক সম্মতিপ্রবণ হওয়া আমাদের আনন্দ দেয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে। কিন্তু কখনো কখনো অন্যকে তুষ্ট করার অতিপ্রবণতা আমাদের মধ্যে বিরক্তি, জড়তা, অসহায়ত্ববোধেরও উদ্রেক ঘটায়। অন্যদের দ্বারা অবমূল্যায়িত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে অন্যকে তুষ্ট করতে থাকেন, আপনার মধ্যে দেখা দিতে পারে বেশ কিছু সমস্যা। অন্যকে তুষ্ট করার অতিপ্রবণতার সমস্যাটি বিষণ্নতা বা উদ্বেগের মতো স্বীকৃত কোনো রোগ নয়। তবে এটি অনেকের জন্য মানসিক যন্ত্রণা বা পীড়ার কারণ হয়ে ওঠে। কাজেই এ বিষয় সচতেনতাও জরুরি। প্রথমে জেনে নিন, যেসব লক্ষণ থাকলে বুঝবেন, আপনি অন্যকে তুষ্ট করার অতিপ্রবণতায় ভুগছেন।
অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়া
কোনো ভুল না করেও আপনি যখন বারবার ক্ষমা চান বা ‘সরি’ বলেন, তখন বুঝতে হবে যে অন্যকে তুষ্ট করার অতিপ্রবণতা আপনার মধ্যে আছে। আপনি সহজে অন্যের অসুবিধার কারণ হতে চান না।
অন্যের অনুভূতির দায় নিজের ওপর চাপানো
অন্যের হতাশা, ক্ষোভ কিংবা মানসিক বিপর্যয়ের জন্য নিজেকে দায়ী ভাবা এবং তা সমাধানে করতে নিজের এগিয়ে যাওয়া অন্যকে তুষ্ট করার অতিপ্রবণতার আরেকটি লক্ষণ।
সম্মত না হয়েও সম্মতি দেওয়া
নিজের ভালো না লাগা সত্ত্বেও অন্যের পছন্দ-অপছন্দ এবং মতামতকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য যেকোনো কিছুতে নিজের সম্মতি দেওয়া অন্যকে তুষ্ট রাখার অতিপ্রবণতার অন্যতম লক্ষণ।
ঝামেলা এড়াতে সব সময় ‘হ্যাঁ’ বলা
কোনো দ্বন্দ্ব বা ঝামেলার উদ্ভব যেন না হয়, তাই সব সময় ‘হ্যাঁ’ বলা অন্যকে তুষ্ট রাখার অতিপ্রবণতার আরেক লক্ষণ।
নিজের প্রয়োজনের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল না থাকা
নিজের প্রয়োজনের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল না থাকাও আরেকটি লক্ষণ। লোকে কী ভাববে, এই ভেবে নিজের প্রয়োজনে কথা মুখ ফুটে বলতে না পারা আমাদের একটা বদভ্যাস।
আমরা কেন অন্যকে তুষ্ট রাখার ব্যাপারে এত সচেষ্ট
অন্যকে তুষ্ট রাখার এই প্রবণতার অনেক কারণ থাকতে পারে। সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের একটি তীব্র আকাঙ্ক্ষা এর প্রধান কারণ হতে পারে। এটি ‘সোশিওট্রপি’ নামের একপ্রকার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা কম আত্মসম্মানবোধ এবং প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভীতি থেকে উদ্ভব হয়। বিষণ্নতা বা উদ্বেগ থেকেও এটি শুরু হতে পারে। এ ছাড়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে মানসিক আঘাত পাওয়ার পর থেকে এ রকম সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অন্যকে তুষ্ট রাখার অতিপ্রবণতা থেকে বাঁচতে হলে যা করবেন
নিজেকে তুষ্ট করতে শিখুন
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা অন্যের প্রতি খুব সহনশীল, কিন্তু নিজের ব্যাপারে খুবই কঠোর। তাই নিজের ব্যাপারে আগে যত্নবান হোন। নিজেকে সময় দিন। নিজেকেই প্রশ্ন করুন, কোন কাজটি করলে আপনার ভালো লাগবে, কী করলে আপনি আনন্দ পাবেন। এর উত্তর হতে পারে একটু হেঁটে বেড়ানো কিংবা বিকেলবেলা এক কাপ চা খাওয়া। আপনাকে যা শান্তি দেবে, আপনার মনকে যা প্রশান্ত করবে তা–ই করুন।
‘না’ বলতে শিখুন
যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের কাজ করতে আপনার অসুবিধা হতেই পারে। অন্যের সঙ্গে তাল মেলানোর আগে তাই নিজের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাবুন। প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শিখুন। ‘না’ বলতে পারার এই চর্চা আপনাকে স্বাধীনতা দেবে। আপনি আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবেন ধীরে ধীরে।
পুনশ্চ: যাঁরা সব সময় অন্যকে তুষ্ট করার অতিপ্রবণতায় ভোগেন, তাঁরা পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে বেশি থাকুন। নিজের কমফোর্ট জোন খুঁজে বের করুন। যাঁরা আপনার খবর রাখেন, যাঁরা আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং যাঁরা আপনার মতামত মূল্যায়ন করেন, তাঁদের সঙ্গে থাকুন। দেখবেন, অন্যকে তুষ্ট রাখার অতিপ্রবণতার সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট