প্রি-একলাম্পসিয়া যাঁদের বেশি হয়

একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রথমবার সন্তান ধারণের সময়ই প্রি-একলাম্পসিয়া হতে পারে আর যাঁদের আগের সন্তান ধারণের সময় প্রি-একলাম্পসিয়া হয়েছিল, তাঁদের ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে পুনরায় এটি হতে পারে। যেসব মা উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা কিংবা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় প্রি–একলাম্পসিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এ ছাড়া একাধিক গর্ভধারণ, পলিহাইড্রামনিওস প্রি-একলাম্পসিয়ার কারণ হতে পারে।

প্রি-এক্লাম্পসিয়া হচ্ছে গর্ভবতী নারীদের এক ধরনের রোগ, যাতে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের সঙ্গে প্রচুর প্রোটিন নির্গত হয় বা অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

উপসর্গ

প্রি-একলাম্পসিয়া দুই ধরনের। মাইল্ড বা মৃদু ও সিভিয়ার বা তীব্র। মৃদু প্রি-একলাম্পসিয়ার ক্ষেত্রে রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমি মারকারির বেশি থাকে, কিন্তু ১৬০/১১০ মিমি মারকারির কম থাকে। তীব্র প্রি-একলাম্পসিয়ার ক্ষেত্রে রক্তচাপ ১৬০/১১০ মিমি মারকারির বেশি থাকে। সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ থাকে, যেমন মাথাব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া, ঝাপসা দেখা, পেটব্যথা, প্রস্রাব কমে যাওয়া, পুরো শরীরে পানি আসা ইত্যাদি।

ঝুঁকি

প্রি-একলাম্পসিয়ায় প্রেগন্যান্সি হয় ঝুঁকিপূর্ণ। প্রি-একলাম্পসিয়া মারাত্মক পর্যায়ে গেলে একলাম্পসিয়া বা খিঁচুনি হয়, যা মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ। কম ওজনের শিশুর জন্মদান, সময়ের আগে প্রসব, মাতৃগর্ভে শিশুমৃত্যু, এন্টিপারটাম হেমোরেজ ইত্যাদি সমস্যা প্রি-একলাম্পসিয়ায় আক্রান্ত মায়েদের ক্ষেত্রে সচরাচর ঘটে থাকে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এর জটিলতা হিসেবে কিডনি ও লিভার ফেইলর কিংবা ব্রেন হেমোরেজও হতে পারে। কিছু রোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণসহ অন্যান্য জটিলতা হয়।

চিকিৎসা

  • অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রি-একলাম্পসিয়া নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে।

  • মৃদু প্রি–একলাম্পসিয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে বাসায় রাখা যেতে পারে; কিন্তু মারাত্মক প্রি-একলাম্পসিয়ায় রোগীকে বাসায় রাখার সুযোগ নেই।

  • মারাত্মক প্রি-একলাম্পসিয়ায় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে মা ও শিশুর নিয়মিত ও সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।

প্রতিরোধ

  • যেহেতু প্রি-একলাম্পসিয়ার সঠিক কারণ জানা যায়নি, তাই এর প্রতিরোধেরও নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে যাঁরা এর ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট জাতীয় ওষুধ প্রতিরোধক হিসেবে দেওয়া যায়।

  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপের মাধ্যমে প্রি-একলাম্পসিয়া প্রতিরোধ ও এর জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

    • ডা. ফারজানা ইসলাম, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার লি., মিরপুর ৬, ঢাকা