বেড়াতে গিয়ে শিশুর দিকে বিশেষ খেয়াল রাখছেন তো?

খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চারা যেন হঠাৎ অভিভাবক থেকে আলাদা না হয়ে যায়
ছবি : কবির হোসেন

কদিন পরেই শুরু হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি। এর পরই পয়লা বৈশাখ। সব মিলিয়ে বেশ লম্বা একটা ছুটি পাবেন সবাই। অনেকেই পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাবেন। স্বাভাবিকভাবে শিশুরাও সঙ্গী হবে এ ভ্রমণে। এই গরমে বেড়াতে গেলে শিশুদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন ও সতর্কতা। যাতে তারা অসুস্থ হয়ে না পড়ে। যাত্রা শুরুর আগেই কত দিন কোথায় থাকা হবে, ভ্রমণ পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে হবে। এ সময় যেকোনো ভ্রমণে রাস্তায় যানজটে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। তাই যাত্রাপথে বাচ্চাদের যেন কষ্ট না হয়, সে জন্য সঙ্গে শুকনা খাবার, পানি ও পানীয়–জাতীয় খাবার নিতে হবে। রাস্তায় শিশুর বমি করার অভ্যাস থাকলে সে জন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাচ্চারা এমনিতেই ঘামে বেশি। বেড়াতে গিয়ে খেলাধুলা করে ঘেমে নেয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই মা–বাবাকে খেয়াল করে বেশি জামাকাপড় সঙ্গে নিতে হবে। বাচ্চার ঘাম যেন শরীরে বসে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। গ্রামের বাড়িতে গেলে বাচ্চাদের ছোটাছুটির অন্ত থাকে না।

অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চারা যেন হঠাৎ অভিভাবক থেকে আলাদা না হয়ে যায়। পুকুর বা জলাশয়ের কাছে সাঁতার না জেনে একা চলে না যায়। অচেনা রাস্তা এবং অচেনা মানুষ সম্পর্কেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বছরের এই সময়ে কালবৈশাখী, বজ্রপাত, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। এসব থেকে বাচ্চাদের আগলে রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকাসহ সারা দেশেই বিদ্যুতায়িত হওয়ার ঝুঁকি যেমন অনাবৃত বিদ্যুৎ–সংযোগের উৎস, যত্রতত্র বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে থাকাসহ বিভিন্ন উচ্চ ভোল্টেজের যন্ত্রপাতিও বাচ্চাদের হাতের নাগালে থাকতে পারে। এ জন্য ঘরে-বাইরে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন বিদ্যুৎ সঞ্চালন তারে সংযুক্ত পোল বা গাছ থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। ছেঁড়া কেব্‌লের কাছে শিশুরা যেন আসতে না পারে, বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের আশপাশে বাচ্চারা যেন যেতে না পারে। বাচ্চারা যেখানে খেলছে, সেখানে যেন ধারালো অথবা বাচ্চা ব্যথা পেতে পারে, এমন কিছু না থাকে। খোলা জায়গায় বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে।

বাচ্চারা যেন ঘরে বসেও খেলা করতে পারে, এ জন্য সঙ্গে বেশ কিছু খেলনা নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। খেলনা মুখে দিয়ে গলায় আটকে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটাতে পারে, সে জন্য সাধারণত তিন বছরের নিচের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বড় খেলনা নেওয়া ভালো। অপরিচিত জায়গায় বাচ্চাদের খাবার এবং পানীয় সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত গরমে বাচ্চাদের পানিশূন্যতা হতে পারে। এ জন্য বারবার পানি ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে। বাইরের বিভিন্ন জিনিস খেয়ে যেন বাচ্চার ডায়রিয়া বা বমি না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চাকে যদি নিয়মিত কোনো ওষুধ খেতে হয়, যাত্রার আগেই চিকিৎসাপত্রসহ সেগুলো গুছিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া বেড়াতে গিয়ে জ্বর, সর্দি, কাশি ও বমির মতো সাধারণ কিছু সমস্যার জন্য প্রয়োজনীয় ওভার দ্য কাউন্টার কিছু ওষুধ, ফার্স্ট এইড ও কিটস সঙ্গে রাখা যেতে পারে। কারণ, জরুরি মুহূর্তে সেসব আশপাশে না–ও পাওয়া যেতে পারে। এসব ছাড়াও অভিভাবকের সঙ্গে ছাতা, সানস্ক্রিন, মশা বা বিভিন্ন পোকামাকড় তাড়ানোর লোশন, স্যানিটাইজার ও টিস্যু থাকা প্রয়োজন। সবশেষে যেখানে বেড়াতে যাওয়া হচ্ছে, সেখানকার স্থানীয় জরুরি সেবাগুলোর সঙ্গে যেন প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায়, সে জন্য জরুরি ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখতে হবে।