শীতের পিঠাপুলি খাওয়ার উৎসবের সঙ্গে কিছু রোগবালাই বেড়ে যায়। যেমন ত্বকের সমস্যা, জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি। একই সঙ্গে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক ও মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাপমাত্রা যত নামে, ততই যেন অনেকের বুকে পাথর চেপে বসে। প্রতিবছর শীতকালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। শীতের প্রভাবে রক্তচাপের পরিমাণ ১২ থেকে ১৮ মিলিমিটার বাড়তে পারে, যা গবেষণায় প্রমাণিত।
কেন এমন হয়
হঠাৎ তাপমাত্রায় হেরফের হলে তার প্রভাব শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো হৃদ্যন্ত্রের ওপরও পড়ে। শীতে আমাদের শরীরে স্নায়ুব্যবস্থার ‘সিমপ্যাথেটিক অ্যাকটিভেশন’ বেড়ে যায়। তাই রক্তনালি সংকুচিত হতে পারে। একে বলে ‘ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন’। এতে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ করতে হৃদ্যন্ত্রকে দ্বিগুণ কাজ করতে হয়। বাইরের তাপমাত্রা অনেকটা কমলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে অসুবিধা হয়। তাতে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে, যাতে হৃদ্যন্ত্রের রক্তনালির ক্ষতি হয়।
যাঁদের এমনিতেই হৃদ্রোগ রয়েছে, তাঁদের শরীর এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমশিম খায়। তার ওপর শীতে শরীরের অক্সিজেন বেশি লাগে। ভ্যাসোকনস্ট্রিকশনের জন্য এমনিতেই রক্তনালি সরু হয়ে যায়। তাই হৃদ্যন্ত্রে কম পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছায়। এতেই হৃদ্রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
শীতে আরও কিছু কারণে হৃদ্রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা বাড়ে। ঠান্ডা পড়লে সবাই একটু বেশি ঘরকুনো হয়ে যান। হাঁটাচলা বা শরীরচর্চার ইচ্ছা কমে যায়। খাদ্যাভ্যাসেও বদল আসে। এমন খাবার বেশি খাওয়া হয়, যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শীতে আমাদের দেশে বিয়ে, নিমন্ত্রণ, উৎসব বেড়ে যায়।
শীতকালে অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়ে অনেকের। অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ভোগাতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের জটিল সংক্রমণ হলে অক্সিজেন টানতে সমস্যা হয়। তখন হৃৎপেশির ওপর চাপ পড়তে পারে।
কী করণীয়
কোলেস্টেরল বা রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, এমন খাবার থেকে দূরে থাকুন।
ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও ব্যায়ামের চেষ্টা করতে হবে।
বাইরের তাপমাত্রা বুঝে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করুন। যথাযথ শীতবস্ত্র পরুন যেন ঠান্ডা না ধরে।
বয়স্ক হৃদ্রোগীদের প্রতিদিন গোসল না করে এক দিন পরপর হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করা ভালো। খুব গরম পানিতে গোসলে স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। সতর্ক থাকুন।
ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি বিভাগ, আলোক হেলথকেয়ার লি., ঢাকা