হাত-পা জ্বালাপোড়া করে, কী করব

অনেক কারণেই হাত-পায়ে জ্বালাপোড়ার মতো অনুভূতি হয়ে থাকে
ছবি: সংগৃহীত

হাত-পায়ে জ্বালাপোড়ার মতো অনুভূতি অনেক কারণেই হয়ে থাকে। প্রধান কারণটি হলো স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে বলে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি।

সঠিক রোগ নির্ণয় করার জন্য রোগীর ইতিহাস, রোগীকে পরীক্ষা করে দেখার পাশাপাশি কিছু ল্যাবরেটরি টেস্ট, এনসিভি এবং প্রয়োজন হলে ইমেজিং দরকার হতে পারে।

দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস, বিশেষ করে যদি ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তাহলে অন্যান্য জটিলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হয়ে থাকে। আবার ডায়াবেটিসের চিকিৎসার সঙ্গেও এটি জড়িত। যেমন ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিন দীর্ঘদিন খেলে ভিটামিন বি১২ ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা নিউরোপ্যাথির একটি কারণ। তাই যাঁরা মেটফরমিন খান, তাঁরা মাঝেমধ্যে ভিটামিন বি১২ লেভেল পরীক্ষা করবেন।

হাত-পা জ্বালাপোড়ার পেছনে থাকতে পরে লুকানো অনেক রোগ। কেবল এর-ওর কথায় ভিটামিন বা নার্ভের ওষুধ না খেয়ে কারণ নির্ণয় করা জরুরি

আন্ত্রিক জটিলতার জন্য কারও যদি খাবার হজমে সমস্যা থাকে, তাদের সব ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি দেখা যায়। সে ক্ষেত্রেও নিউরোপ্যাথি হতে পারে।

যক্ষ্মা রোগের ওষুধ খেলেও নিউরোপ্যাথি হয়, একে ঠেকাতে সঙ্গে পাইরিডক্সিন (ভিটামিন বি৬) দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু সংক্রমণ যেমন কুষ্ঠ বা লেপ্রসিতে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনো ভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে যদি শরীরে পানিভর্তি ফুসকুড়ি (হারপিস জোস্টার) হয়, তাহলে সেরে যাওয়ার পরও ওই স্থানে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হতে পারে। একে বলে পোস্ট ভাইরাল নিউরালজিয়া। সাধারণত বুক, পেট, পিঠে এই সমস্যার জন্য আক্রান্ত স্থানে জ্বালাপোড়া মতো অনুভূতি হয়ে থাকে।

বাতের সমস্যা যেমন রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস হতে পারে নিউরোপ্যাথির অন্তর্নিহিত কারণ। সারকোইডোসিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, থ্যালামিক স্ট্রোকের মতো স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাও হতে পারে হাত পায়ের অনুভূতির সমস্যার কারণ। ক্যানসারের কারণে বা ক্যানসারের কেমোথেরাপি চিকিৎসার জন্যও এ রকম লক্ষণে রোগী কষ্ট পেতে পারেন।

কখনো কখনো বিশেষ কোনো স্নায়ু শরীরের যে যে স্থানে বিস্তৃত, শুধু সেই স্থান জুড়ে ঝিনঝিন বা জ্বালা ধরা অনুভূতি হয়। যেমন হাতে হলে এটাকে বলে কারপাল টানেল সিনড্রোম, পায়ে হলে টারসাল টানেল সিনড্রোম, আর ঊরুর বাইরের দিকেও এমন অনুভূতি হতে পারে (মেরালজিয়া প্যারেস্থেটিকা)। কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোমগুলো শনাক্ত করতে এনসিভি পরীক্ষা করা হয়।

তাই হাত-পা জ্বালাপোড়ার পেছনে থাকতে পরে লুকানো অনেক রোগ। কেবল এর-ওর কথায় ভিটামিন বা নার্ভের ওষুধ না খেয়ে কারণ নির্ণয় করা জরুরি। কারণ, এর চিকিৎসা করাটাও জরুরি। প্রথম দিকেই চিকিৎসা নিলে রোগটার জটিলতা কমানো সহজ হবে। এর চিকিৎসায় ভিটামিন বি আর প্রিগাবালিন/গাবাপেন্টিন বা আরও কিছু চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সঠিক কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন আগে।

*ডা. রোজানা রউফ: সহযোগী কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা