কোন পানীয় কখন আপনার কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

কিডনি সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া প্রয়োজন, এ তো সবাই জানেন। পানীয় থেকেও মেটে পানির চাহিদা। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের পানীয় খান। বিশেষত গরমে বাহারি পানীয় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, সব পানীয়ই কিডনির জন্য ভালো নয়। অনেক পানীয় দীর্ঘ মেয়াদে কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অনেক পানীয় দীর্ঘ মেয়াদে কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারেছবি: এআই/প্রথম আলো

পানীয় সুস্বাদু করে তুলতে লবণ কিংবা চিনির মতো উপাদান মেশানো হয়। দীর্ঘদিন এসব উপাদান গ্রহণ করার কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাজারে এমন অনেক পানীয় পাওয়া যায়, যা সংরক্ষণের সুবিধার্থে কিংবা আকর্ষণীয় রঙের জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো হয়। এসবের প্রভাবেও কিডনির ক্ষতি হয়। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তোফায়েল আহম্মদ

কোন পানীয় কখন সুস্থ ব্যক্তির কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে

কোমল পানীয়

কোমল পানীয় কারও জন্যই স্বাস্থ্যকর নয়। এতে মেশানো চিনির কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে। এভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিডনির কার্যক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়। প্রায়ই গ্রহণ করলে এনার্জি ড্রিংকও কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

প্যাকেটজাত জুস

জুস সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক যোগ করে প্যাকেটজাত করা হয়। চিনি ও অন্যান্য রাসায়নিক থাকার কারণে এসব জুস স্বাস্থ্যকর নয়। প্রায়ই যদি কেউ এ ধরনের পানীয় খান, তাহলে এসবের কারণে তাঁর কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়বে।

আরও পড়ুন

শরবত

সাধারণত শরবতে চিনি, লবণ বা বিট লবণের মতো উপাদান যোগ করা হয়। চিনি তো ক্ষতিকর বটেই, যেকোনো ধরনের লবণ অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। লবণ নিঃসন্দেহেই দেহের জন্য উপকারী, তবে তা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়। রোজকার প্রয়োজনীয় লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম আমরা পেয়ে যাই রান্না করা খাবার থেকেই। পানীয়ে বাড়তি লবণ মিশিয়ে আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করলে আপনার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়বে। বাড়বে কিডনির রোগের ঝুঁকিও। লবণ বা বিট লবণের মতোই অন্য যেকোনো লবণের বেলায় এ কথা প্রযোজ্য। বুঝতেই পারছেন, বাড়িতে বানানো হলেও শরবত আপনার কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে যখন শরীর থেকে প্রয়োজনীয় সোডিয়াম বেরিয়ে যায়, তখন লবণ মেশানো পানীয় আপনার কিডনির উপকার করে। যেমন গরমের সময় অতিরিক্ত ঘাম হলে আপনি সামান্য লবণ মেশানো পানীয়ে উপকার পাবেন। এমনিতে ফলের রস খেতে চাইলে চিনি–লবণ ছাড়াই খাবেন।

আরও পড়ুন

ওরস্যালাইন, ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক, স্পোর্টস ড্রিংক ও গ্লুকোজ

এসব পানীয় নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য তৈরি করা হয়, যেমন ওরস্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকে যে সোডিয়াম থাকে, সুস্থ–স্বাভাবিক অবস্থায় তা নিয়মিত গ্রহণ করলে আপনার জন্য অতিরিক্ত হয়ে দাঁড়াবে। অতিরিক্ত ঘাম হলে আবার ওরস্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক থেকে উপকার পাবেন। স্পোর্টস ড্রিংকের উপাদানগুলোও অ্যাথলেটিকস বা অন্যান্য খেলাধুলার সময়ই প্রয়োজন হয়। খেলাধুলার মতো শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া এসব স্পোর্টস ড্রিংক গ্রহণ থেকেও বিরত থাকুন। আবার যখন আপনি পর্যাপ্ত খাবার খেতে পারছেন না কিংবা যখন অন্য কোনো কারণে আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেছে, তখন গ্লুকোজের পানিতে আপনার জীবন বাঁচতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়মিত গ্লুকোজের পানি গ্রহণ করলে আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবে। একসময় এই কারণে ঝুঁকিতে পড়বে আপনার কিডনি। আরও মনে রাখবেন, ডায়রিয়ার সমস্যায় স্যালাইন খাওয়া প্রয়োজন। গ্লুকোজের পানি কিন্তু স্যালাইন নয়।

অ্যালকোহল

অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় দেহের বহু ক্ষতির জন্য দায়ী। এসব পানীয় সেবনের ফলে কিডনির কার্যক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমে আসে। এ ধরনের পানীয় যেকোনো অবস্থাতেই বর্জনীয়।

আরও পড়ুন