কম বয়সীদের মধ্যেও অকস্মাৎ মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে কেন

প্রতীকী ছবি
ছবি: সংগৃহীত

আপাতদৃষ্টে সুস্থ–স্বাভাবিক একজন মানুষ দিব্যি কাজকর্ম করছেন, চলেফিরে বেড়াচ্ছেন, হঠাৎ করেই কোনো রকম জানান না দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন। খুব দুঃখজনক হলেও এই ধরনের আকস্মিক মৃত্যুর কারণ বের করা বা এর প্রতিকার করা খুব সহজ নয়। মূলত আমাদের জীবনীশক্তির কেন্দ্রবিন্দু যে হৃদ্‌যন্ত্র, সেটির কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটলেই আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য এই ধরনের আকস্মিক মৃত্যুকে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ বলা হয়। সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ হতে পারে যেকোনো বয়সে। তবে ৪০ বছর বয়সের আগে আগে হঠাৎ মৃত্যু হলে এটিকে ‘সাডেন অ্যাডাল্ট ডেথ সিনড্রোম’ বলা যেতে পারে। আবার পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫০ বছর আর মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের আগে আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে সেটিকে প্রিম্যাচিউর কার্ডিয়াক ডেথও বলা হয়।

আরও পড়ুন

হৃদ্‌যন্ত্রের যেসব সমস্যায় হঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারে, তার ভেতর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বজনীন সমস্যাটি হচ্ছে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, যাকে আমরা হার্ট অ্যাটাক নামেই চিনি। হার্টের রক্তবাহী ধমনিতে প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা থেকে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে মাংসপেশির ক্ষতি হয়, যার কারণে হৃৎপিণ্ডের কার্যকলাপ আকস্মিকভাবে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে ঘটে অকস্মাৎ মৃত্যু। এ ছাড়া হার্ট অ্যাটাক হলে হৃদ্‌যন্ত্রের নিয়মিত ছন্দ হঠাৎ করেই অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে, যা অ্যারিদমিয়া নামে পরিচিত। মারাত্মক রকম অ্যারিদমিয়া হলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটার আশংকা বেড়ে যায়। এ ছাড়া হৃদ্‌যন্ত্রের কিছু জন্মগত ত্রুটি, ছন্দজনিত সমস্যা, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির কিছু রোগ; যেমন কার্ডিওমায়োপ্যাথি, হার্টের ভালভের সমস্যা, ইত্যাদি কারণেও হতে পারে আকস্মিক মৃত্যু।

বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এসব ভাইরাস, যেমন করোনা বা ডেঙ্গু হৃদ্‌যন্ত্রের মাংসপেশির প্রদাহ বা মায়োকার্ডাইটিসের কারণ হতে পারে। মায়োকার্ডাইটিসও হঠাৎ মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে। আবার কখনো কখনো জমাট রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে ফুসফুসে পৌঁছে ফুসফুস এবং হৃৎপিণ্ডের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে অকস্মাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। হৃৎপিণ্ড ছাড়াও মস্তিষ্কের জটিল রক্তক্ষরণ থেকেও আকস্মিক মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। কখনো কখনো হৃৎপিণ্ডের রক্তবাহী নালি ফেটে গেলেও মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

ইদানীং আমরা দেখতে পাচ্ছি তুলনামূলক কম বয়সীদের ভেতরও অকস্মাৎ মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে। এর জন্য আসলে একটি নয়, কয়েকটি কারণ রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। কারণ, আমাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে, খাদ্যাভ্যাস বদলে যাচ্ছে, জীবন হয়ে পড়ছে নানা চাপে পর্যুদস্ত। তাই আমাদের উচিত হৃদ্‌যন্ত্রের যথাযথ যত্ন নেওয়া, জীবনযাপনের পদ্ধতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাও খুব জরুরি। এতে করে সব মৃত্যু হয়তো প্রতিরোধ করা যাবে না, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভাব্য জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যাবে।