যে দুই সময়ে না চাইলেও নারীর ওজন বাড়ে

৪৫ থেকে ৫০–এর মাঝামাঝি বয়সে নারীদের মেনোপজ হয়। এ সময় শরীরে বিএমআর কমে যায়, অর্থাৎ খাবার থেকে উৎপাদিত শক্তি তৈরির হার কমে যায়। এ ছাড়া নানা হরমনাল ভারসাম্যহীনতাও দেখা দেয়। এ কারণে ওজন কমাতে চাইলেও মেনোপজের সময় নারীদের ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যায়।

অনেকেই মনে করেন, বয়স ৩০ পেরোলেই ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়। আসলেই কি ওজন বৃদ্ধির নির্দিষ্ট কোনো বয়স আছে? বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ জানান, না, নেই। যেকোনো বয়সেই বাড়তে পারে ওজন, তবে বিভিন্ন বয়সে ওজন বৃদ্ধির কারণগুলোও আলাদা। সেগুলো জানলে যেকোনো বয়সেই ওজন বেড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক একটি শিশুর জন্ম দিতে হলে একজন স্বাভাবিক নারীর ওজন গর্ভাবস্থায় কম করে হলেও ১৩ থেকে ১৪ কেজি বৃদ্ধি পেতে হবে। আবার সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর জন্যও মাকে ভালোমতো খেতে হয়। তখন ওজন কিছুটা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়। এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু শিশু বড় হতে শুরু করলে মাকেও খাবার স্বাভাবিক পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘ছয় মাস বয়স হলে শিশুকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া শুরু হলে মায়েরও অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন কমে আসে। এ সময় মায়েরা খাবারের পরিমাণ না কমালে বাড়তি ওজন দীর্ঘদিনের জন্য থেকে যায়।’

সন্তান হবার নির্ধারিত সময় পর মায়েরা খাওয়া কমিয়ে দিলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কমে আসে
ছবি: নকশা

৪৫ থেকে ৫০–এর মাঝামাঝি বয়সে নারীদের মেনোপজ হয়। এ সময় শরীরে বিএমআর কমে যায়, অর্থাৎ খাবার থেকে উৎপাদিত শক্তি তৈরির হার কমে যায়। এ ছাড়া নানা হরমনাল ভারসাম্যহীনতাও দেখা দেয়। এ কারণে ওজন কমাতে চাইলেও মেনোপজের সময় নারীদের ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যায়। ‘পুরুষদের ক্ষেত্রে যেকোনো বয়সেই ওজন বাড়তে পারে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ এবং সেটা খরচ না করলে ওজন বাড়বেই,’ বলেন শামছুন্নাহার নাহিদ।

শিশু বয়সেও বাড়তে পারে ওজন

জন্মের সময় শিশুর স্বাভাবিক ওজন হয় আড়াই থেকে সাড়ে তিন কেজি। তবে কিছু ক্ষেত্রে শিশুর ওজন চার কেজির বেশি হয়। এ শিশুদের বলা হয় ম্যাক্রোসোমিক বা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে জন্মানো শিশু। গর্ভকালীন অবস্থায় মা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেলে অথবা কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হতে পারে শিশু। এ ধরনের শিশুদের সারা জীবনই ওজন বেশি থাকার আশঙ্কা থাকে বলে জানান শামছুন্নাহার নাহিদ। বলেন, ‘জন্ম থেকেই বেশি ওজনের শিশুদের প্রায় ৮০ শতাংশই সারা জীবন অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভোগে।’

শিশুদের খাওয়া নিয়ে জোর না করাই ভালো
ছবি: অধুনা

আবার কখনো কখনো শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মালে মায়েরা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েন; শিশুকে জোর করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়াতে থাকেন। এ ছাড়া শিশুকে খেলাধুলায় উৎসাহী না করে মোবাইল বা টেলিভিশনের সামনে বসিয়ে রাখেন। এতে শিশুর ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়। শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘শিশুর ওজন প্রতিবছর যদি দুই কেজি করেও বাড়ে, প্রাপ্তবয়স্ক হতে হতে তার ওজন অনেক বেড়ে যায়।’