কীভাবে বুঝবেন কোলোরেক্টাল ক্যানসার, জানালেন বিশেষজ্ঞ

কোলোরেক্টাল ক্যানসার সচেতনতায় বাংলাদেশ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ
ছবি : প্রথম আলো

বর্তমান সময়ে কোলোরেক্টাল বা কোলন ক্যানসার বেশ প্রচলিত একটি রোগ। মলাশয়, বৃহদন্ত্রের মলনালি বা অ্যাপেন্ডিক্স অংশে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধির কারণে এটি হয়ে থাকে। এককথায় অ্যাপেন্ডিক্স, পায়ুপথ ও বৃহদন্ত্রের ক্যানসারই ‘কোলোরেক্টাল ক্যানসার’।

সারা বিশ্বে এই রোগে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ মারা যায়। নতুন করে আক্রান্ত হয় প্রায় দেড় লাখ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কোলন ক্যানসারে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। মৃত্যুর দিক দিয়ে এই ক্যানসারটির স্থান নবম।

মার্চ হলো ‘কোলোরেক্টাল ক্যানসার সচেতনতা’ মাস। বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে—এ বিষয়কে সামনে রেখে গতকাল বুধবার একটি অনলাইন সচেতনতামূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। বৈঠকের আলোচনার বিষয় ছিল কোলোরেক্টাল ক্যানসার সচেতনতায় বাংলাদেশ। আলোচনায় অংশ নেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. অসীম কুমার ঘোষ। সঞ্চালনা করেন ডা. নাদিয়া নিতুল। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ।

আলোচনার শুরুতে কোলোরেক্টাল ক্যানসার নিয়ে ডা. অসীম কুমার ঘোষ বলেন, ‘আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি হওয়া পাঁচ ক্যানসারের একটি কোলোরেক্টাল ক্যানসার। আগে বলা হতো, কোলোরেক্টাল ক্যানসার বৃদ্ধ, বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্বদের হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেক অল্প বয়সী এমনকি শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’

একজন স্বাভাবিক মানুষ কীভাবে বুঝবেন এই ক্যানসারে আক্রান্ত? ডা. অসীম কুমার ঘোষ জানান, কোলোরেক্টাল ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন। পর্যায়ক্রমে ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য, মলের সঙ্গে রক্ত মিশে থাকা, ওজন কমে যাওয়া, রক্তশূন্যতা, শারীরিক দুর্বলতা এবং পেটে অস্বস্তি ভাব যেমন গ্যাস, পেট ফুলে থাকা, পেট ভর্তি-ভর্তি ভাব, পেট কামড়ানো ইত্যাদি। রোগের শেষপর্যায়ে মলত্যাগ করতে না-পারা বা অন্ত্রনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি হয়।

কী কী উপায় অবলম্বন করলে কোলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়—এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. অসীম জানান, ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে কোনো একটি কারণকে নির্দিষ্ট করা যায় না। তবে কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে, যেগুলো এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে কিছু জিনগত ও কিছু পরিবেশগত। পরিবেশগত কারণে পুরুষেরা কোলোরেক্টাল ক্যানসারে তুলনামূলক বেশি আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোতে বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোগটি থেকে বাঁচতে হলে কোনোভাবেই প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া যাবে না। যারা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের কোলোরেক্টাল ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আমাদের তুলনায় তাই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্তের হার অনেক বেশি। কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস যেমন ধূমপান কিংবা মদ্যপানেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

আলোচনায় উঠে আসে এই রোগের চিকিৎসার নানা দিক। ডা. অসীম কুমার ঘোষ জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা এড়ানো যায়। এর মধ্যে কিছু রয়েছে, যার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, আবার কিছু আছে যেগুলো আমরা জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিবর্তন করতে পারি। শুরুতেই ধরা পড়লে এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা করা সম্ভব। কোলোরেক্টাল ক্যানসার নিরাময়ে সার্জারি, রেডিয়েশন, কেমোথেরাপি—এর যেকোনোটি বা কয়েকটি একসঙ্গে ব্যবহার করা যায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় কোলোরেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসায় অনেক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি যেমন অ্যান্টিবডি ব্যবহার, জিন থেরাপি, টিউমারের রক্ত চলাচলে বাধা দেওয়া—এ রকম নানা পদ্ধতির মাধ্যমে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

ক্যানসারের বিশ্বমানের ওষুধ এখন বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। শুধু যে বাংলাদেশের মানুষ এই ওষুধ গ্রহণ করছেন তা নয়, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতেও বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ পাঠানো হচ্ছে। অনলাইন আলোচনায় এসকেএফ ফার্মার গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার অনকোলজিস্ট ডা. শাহরিয়ার জানান, ‘বাংলাদেশে এখন ক্যানসারের চিকিৎসা সহজ হয়েছে। বিশ্বমানের ওষুধপ্রাপ্তি ও সেবা চিকিৎসায় স্বস্তি এনে দিয়েছে। ক্যানসারের ওষুধ দেশের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে এখন আমরা বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করছি। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটা গৌরবের বিষয়।’