ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণের ওষুধগুলো কেন ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে

সাধারণত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, অতিরিক্ত ঘামে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়
ছবি: পেক্সেলস

কখনো হঠাৎ লক্ষ করা যায়, ত্বকে সাদা সাদা ছোপ পড়েছে। আবার কখনো দেখা যায় গোল গোল চাকা। এগুলো খুব চুলকায়। এগুলো মূলত ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। ত্বকের ছত্রাক খুব পরিচিত একটি সমস্যা।

যেকোনো বয়সে, যে কেউ এতে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, অতিরিক্ত ঘামে এই সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাঁর নিত্যব্যবহার্য জিনিসের সংস্পর্শে এটি ছড়ায়। তাই হোস্টেল, ব্যারাক বা এসব জায়গায় বসবাস করলে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। মাথার ত্বক, পিঠ, হাত-পা, কুঁচকি, বগল ও শরীরের অন্যান্য ভাঁজে এটি হতে পারে। গোল চাকার মতো ছোপ আর বাইরে লাল আবরণ থাকলে সেটাকে বলে টিনিয়া। বাংলায় একে বলা হয় দাদ। এটি খুব চুলকায়। চুলকানোর কারণে অনেকের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।

করণীয়

ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন:

১. শরীরের বিভিন্ন অংশ, বিশেষ করে যেখানে শরীরের ভাঁজ আছে, সেগুলো শুষ্ক রাখার চেষ্টা করতে হবে।

২. অনেকের বগল, কুঁচকিতে অনেক ঘাম হয়। সে ক্ষেত্রে ডিওডরেন্ট, ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা উচিত।

৩. পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ও পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে।

৪. নিয়মিত গোসল করতে হবে। এ রকম স্যাঁতসেঁতে গরমে বেশি করে গোসল করতে হবে।

৫. যেহেতু এটি ছোঁয়াচে, কারও হলে, তাঁকে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।

চিকিৎসা

ছত্রাকবিরোধী মলম, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়। একেক ধরনের ছত্রাকের জন্য একেক ধরনের ওষুধ কার্যকর। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও সংক্রমণের লক্ষণ বিশ্লেষণ করে, কোনটি কার্যকর হতে পারে, চিকিৎসক সেটি নির্ধারণ করেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে যত্রতত্র ফার্মেসি থেকে ওষুধ বা মলম ব্যবহার করাটা ঝুঁকিপূর্ণ।

অনেকে দোকান থেকে স্টেরয়েডমিশ্রিত মলম ব্যবহার করেন। এতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে।

সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে, এরকম যত্রতত্র ওষুধ সেবনের কারণে এসব ছত্রাকবিরোধী বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ রেসিস্ট্যান্ট বা ওষুধ–প্রতিরোধী হয়ে যাচ্ছে। ফলে যেসব ওষুধ বা ক্রিম চিকিৎসকেরা সাধারণত ব্যবহার করেন, সেগুলো আর কার্যকর থাকছে না। এ ব্যাপারে রোগী ও চিকিৎসক—সবার সচেতন হওয়া উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। যত দিন, যেভাবে ওষুধ ব্যবহার করতে বলবেন, সেটি মেনে চলতে হবে।  


লেখক: ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি