যে ৭টি লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার ‘মাঙ্কি মাইন্ড’ আছে

‘মাঙ্কি মাইন্ড’ মানে কোনো কাজে দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখার অক্ষমতা। যাঁদের মাঙ্কি মাইন্ড আছে, তাঁরা কোথাও মনোযোগ স্থির রাখতে পারেন না; মনটা বানরের মতো এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফিয়ে বেড়ায়। এমন অস্থিরতা যখন আমাদের মনে দেখা দেয়, তখন ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে এলেও শেষমেশ ঘুম আসে না; মনে দানা বাঁধে বিক্ষিপ্ত সব চিন্তাভাবনা এবং উদ্বেগ। তাই জেনে রাখুন মাঙ্কি মাইন্ডের লক্ষণ, পাশাপাশি জেনে রাখুন কীভাবে মনটাকে শান্ত করা যায়—

যাঁদের মাঙ্কি মাইন্ড আছে, তাঁরা কোথাও মনোযোগ স্থির রাখতে পারেন নাছবি: প্রথম আলো

১. বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা

মাঙ্কি মাইন্ড থাকলে বিরামহীনভাবে একটার পর একটা চিন্তা আমাদের মাথায় খেলা করে। এই বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা বেশ বেড়ে গিয়ে ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা খুবই কমে যায় এবং জীবনে নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনে।

এ থেকে মুক্তি পেতে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের চর্চা করতে পারেন। প্রতিদিন যেকোনো একটা সময় কয়েক মিনিটের জন্য কোথাও স্থির হয়ে বসে আপনার চিন্তাভাবনাগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন, এবং অবশ‍্যই নিজেকে কোনোভাবেই বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে যাবেন না। কিছুক্ষণ পর আপনার চিন্তাভাবনা স্থিরতা পাবে।

২. উদ্বিগ্নতা এবং অস্থিরতা

মাঙ্কি মাইন্ডের অন‍্যতম লক্ষণ এই উদ্বিগ্নতা এবং অস্থিরতা। মাঙ্কি মাইন্ডের প্রভাবে ছোটখাটো বিষয়ে সহজেই মন খারাপ হয়ে যায় এবং সামান্য ভুলেই মনের মধ্যে অপরাধবোধ সৃষ্টি হয়। ফলে তৈরি হয় উদ্বেগ আর অস্থিরতা।

এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে মনকে প্রশান্তি দেয়, এমন কিছু কাজ দৈনিক চর্চা করতে পারেন। বুকভরে শ্বাস নেওয়া, মাংসপেশিকে বিশ্রাম দেওয়া, মেডিটেশন করা—এসব আপনার মনকে প্রশান্তি দিতে পারে।

৩. কম মনোযোগ, বেশি অন‍্যমনস্কতা

স্মার্টফোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে বাস করাও মাঙ্কি মাইন্ডের অন্যতম একটি কারণ। সারাদিন নোটিফিকেশনের শব্দ, অন্যের পাঠানো খুদেবার্তা, পোস্টে পাওয়া লাইকের সংখ্যা—আমাদের প্রাত্যহিক কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে ভীষণ বাধা দেয়। খুদেবার্তা পড়ার জন্য ফোন চালু করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লগআউট করার পরও আবার ঢুঁ মারা, সবসময় অন‍্যমনস্কতা বা চিত্ত বিক্ষেপ—এসবও মাঙ্কি মাইন্ডের লক্ষণ হতে পারে।

এর থেকে বাঁচতে দিনের কোন কোন কাজে প্রাধান্য দেবেন, তা ঠিক করে সকাল সকাল সেসব করে ফেলুন। পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কিছু কাজ করার জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন। পারলে ফোনের নোটিফিকেশন সাইলেন্ট করে রাখুন, এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।

৪. ধারাবাহিক মানসিক ক্লান্তি

মাথার মধ্যে উড়ে বেড়ানো নানান রকম চিন্তা অর্থাৎ মাঙ্কি মাইন্ডের প্রভাবে ধারাবাহিকভাবে মানসিক ক্লান্তিবোধ কাজ করতে পারে। মাঙ্কি মাইন্ড থাকলে সারাদিন অতিচিন্তা হয়। ফলে আপনি অসহায়বোধও করতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং পুষ্টিকর খাবার খেলে মনটা চাঙা রাখতে পারেন। আপনাকে আনন্দ দেয়, এমন কিছু করুন। নিজের জন্য কিছু একান্ত সময় রাখুন।

৫. অতিরিক্ত গড়িমসি

গড়িমসি করা মানে হলো কোনো কাজ যতক্ষণ সম্ভব না করে শেষ মুহুর্তে করতে যাওয়া। এটাও মাঙ্কি মাইন্ডের লক্ষণ। এভাবে কোনো কাজ শেষ মুহুর্তে করতে গেলে সহজেই ক্লান্তি চলে আসে, দুশ্চিন্তা হয়, কাজের সুফলও মেলে না।

এর থেকে মুক্তি পেতে যেকোনো কাজ ছোট ছোট অংশে ভাগ করে শেষ করুন। মাঙ্কিমাইন্ড থেকে রেহাই পেতেকোনো কাজ ফেলে রাখা চলবে না। দিনে কী কী কাজ করবেন, সেসবের ডেডলাইন ঠিক করে কাজ সারুন। পারলে ঘণ্টাপ্রতি ডেডলাইন ঠিক করে নিন।

আরও পড়ুন

৬. বর্তমান নিয়ে না ভাবা

মাঙ্কি মাইন্ড আমাদের মনকে অতীত এবং ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত রাখে। ধরুন, আপনি কোনো মিটিংয়ে আছেন। মাঙ্কি মাইন্ড আপনাকে মিটিংয়ে না রেখে, আপনাকে নিয়ে যাবে মিটিং খারাপভাবে শেষ হলে কী হবে কিংবা ভালোভাবে শেষ হলে কী হবে, সেই চিন্তায়। মাঙ্কি মাইন্ড থাকলে এরকম ভালো ও খারাপ উভয় রকমের চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খেতে পারে।

এ সমস্যা থেকে বের হতে চাইলে টুকটাক মেডিটেশন শুরু করতে পারেন। যখন এমন হবে, তখন যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে ভাবার চেষ্টা করুন। একই চিন্তা বারবার করতে থাকুন। আপনার শ্বাস, সংবেদন, দেখা এবং শোনার দিকে মনোযোগ দিন।

৭. সহজে ঘুম না আসা

মাঙ্কি মাইন্ড থাকলে সহজে ঘুম আসে না। ঘুমাতে গেলে মনের মধ্যে নানারকম চিন্তার ডালপালা গজায়। সারারাত বিছানার এপাশ-ওপাশ করতে হয়। শুধু ঘুমের অভাব নয়, এর ফলে তৈরি হয় ক্লান্তি, যা আপনার ব্যক্তিজীবন এবং পেশাগত জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

এই সমস্যা থেকে বাঁচতে ঘুমের রুটিন তৈরি করে মেনে চলুন। রাতে ঘুমের সময় ঘর অন্ধকার রাখুন, ফোন কাছে রাখবেন না এবং তবে প্রশান্তিদায়ক মিউজিক শুনতে পারেন। এতে আপনার ঘুম আসবে দ্রুত। ঘুমানোর সময় মাঙ্কি মাইন্ড দূরে রাখতে ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে অতিউদ্দীপক কিছু, যেমন মুঠোফোন দেখা কিংবা কফি খাওয়ার মতো কাজ থেকে বিরত থাকুন।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন