গ্রিপ উইকনেস বা হাতের মুঠোর দুর্বলতা দূর করবেন কীভাবে

গ্রিপ উইকনেস হলো হাতের তালু ও আঙুল দিয়ে কোনো বস্তু ধরে রাখার শক্তি কমে যাওয়া। এটি একটি উপসর্গ। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সাধারণত বেশি বয়সীদের এ সমস্যা হয়। এটা হলে দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়।

গ্রিপ উইকনেস হলো হাতের তালু ও আঙুল দিয়ে কোনো বস্তু ধরে রাখার শক্তি কমে যাওয়াছবি: পেক্সেলস

কেন হয়, লক্ষণ কী

বেশ কিছু কারণে এই সমস্যা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কারপাল টানেল সিনড্রোম, ঘাড়ের মেরুদণ্ডে রেডিকুলোপ্যাথি, স্নায়ুজনিত সমস্যা (ডায়াবেটিসের কারণে হতে পারে), স্ট্রোকের পর দুর্বলতা ও মোটর নিউরন ডিজিজের মতো নিউরোলজিক্যাল সমস্যা। এ ছাড়া ডি কুইরভেনস টেনোসাইনোভাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস, ট্রিগার ফিঙ্গার ও টেনডন ইনজুরির কারণেও হতে পারে। মায়োপ্যাথি ও মাসকুলার ডিসট্রফির মতো পেশির সমস্যা এবং হাতের ফ্র্যাকচার ও নার্ভে ইনজুরির মতো আঘাতজনিত সমস্যায় হাতের মুঠো দুর্বল হয়ে যায়।

গ্রিপ উইকনেস হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে কোনো বস্তু ধরতে গেলে হাত থেকে পড়ে যাওয়া, লেখার সময় কলম ঠিকমতো না ধরতে পারা, বোতাম লাগানো ও নব ঘুরিয়ে দরজা খুলতে সমস্যা হওয়া, হাতে ঝিমঝিম বা অবশ ভাব ও পেশির ক্ষীণতা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন

চিকিৎসা ও করণীয়

ফিজিয়্যাট্রিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ রোগের উপশম সম্ভব। এর জন্য আগে মূল কারণ নির্ণয় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগের সঠিক ইতিহাস ও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। যদি সন্দেহ হয় যে নিউরোপ্যাথি, তাহলে ইমএমজি বা এনসিভি পরীক্ষা করতে হবে। টেনডন ইনজুরি বা নার্ভে চাপ মনে হলে সে ক্ষেত্রে এমআরআই বা আলট্রাসাউন্ড করতে হবে।

কিছু থেরাপি বেশ কাজের। এর মধ্যে একটি হলো হাতের ফিজিওথেরাপি। ফিঙ্গার স্ট্রেচ, রিস্ট এক্সটেনশন ফ্লেক্সন স্ট্রেচ করা যেতে পারে। হ্যান্ড গ্রিপার ব্যবহার, বিশেষ বস্তু নিয়ে স্কুইজ, রাবার ব্যান্ড দিয়ে ফিঙ্গার এক্সটেনশন করতে পারেন। বাটনিং প্র্যাকটিস ও পেগ বোর্ড গেমেও উপকার পাওয়া যায়।

ব্যথা হলে টেনস থেরাপি, কারপাল টানেল বা টেনডনের প্রদাহে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, পেশির শক্তি ও নমনীয়তা বাড়াতে নিউরোমাস্কুলার ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন, স্প্লিন্ট ব্যবহার, রিস্ট কক আপ স্প্লিন্ট, থাম্ব স্পিকা স্প্লিন্ট, রেস্টিং হ্যান্ড স্প্লিন্ট করা যেতে পারে। স্ট্রোকের পর মিরর থেরাপি কার্যকর।

আরও পড়ুন

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রদাহরোধী ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। নিউরোপ্যাথি থাকলে গাবাপেনটিন বা প্রিগাবালিন, ভিটামিন বি১, বি৬, বি১২ ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অন্য বাতরোগ থাকলে তার চিকিৎসা নিতে হবে।

সহজে ধরা যায়, এমন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। এক হাতে কাজ করার উপায় শিখে নিতে হবে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির ইলেকট্রিক টুথব্রাশ, স্বয়ংক্রিয় তালা, ভয়েস অ্যাকটিভেটেড ফোন ব্যবহার করতে পারেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নিতে হবে। ভারী বস্তু তোলা যাবে না।

ডা. সাকিব আল নাহিয়ান, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুন