গরমে ডায়রিয়া যেন না হয়

প্রতিবছর গ্রীষ্ম এলে ডায়রিয়ায় প্রকোপ বেড়ে যায়। দেশজুড়ে তীব্র গরমের কারণে বাড়ছে ডায়রিয়া। ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালেই সম্প্রতি রোজ গড়ে এক হাজার নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

প্রতিবছর গ্রীষ্ম এলে ডায়রিয়ায় প্রকোপ বেড়ে যায়ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে তীব্র গরমের কারণে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। শুধু ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালেই সম্প্রতি রোজ গড়ে এক হাজার নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সারা দেশের হাসপাতালেও ডায়রিয়ার রোগীর চাপ বাড়ছে।

প্রতিবছর গ্রীষ্ম এলে ডায়রিয়ায় প্রকোপ বেড়ে যায়। এর কিছু কারণও আছে। বিশেষ করে গরমে শহরাঞ্চলে সুপেয় পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির অভাবে পানিবাহিত জীবাণুর মাধ্যমে ডায়রিয়া বেশি ছড়ায়। এ ছাড়া এই তীব্র গরমে পিপাসায় অস্থির মানুষ রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফেরিঘাট ও যানবাহনে দূষিত পানি দিয়ে বানানো শরবত ও লেবুপানি পান করেন। করোনা কমে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যাবিধি মানতে, বিশেষ করে হাত ধোয়ায় অনীহা ডায়রিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ঘন ঘন বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবার সহজেই নষ্ট হচ্ছে। গরমে খাবারে সহজে জীবাণু বাসা বাধে, আর ওসব খাবার খেলে হয় ডায়রিয়া। এ ছাড়া বেড়ে যায় মশা–মাছির প্রকোপ।

ডায়রিয়া হলে ঘাবড়াবেন না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, বেশি করে খাবার স্যালাইন খেতে হবে, অন্যান্য পানীয় বেশি করে পান করতে হবে। পানিশূন্যতা যেন না হয়, সেদিকে নজর রাখা জরুরি, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। বাইরের পানি, পানীয় ও খাবার পরিহার করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রস্রাব ঠিকমতো হয় কি না, কাঁদলে চোখে পানি আসে কি না, নেতিয়ে পড়ে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে।

ডায়রিয়া চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা খাবার স্যালাইন
ছবি: প্রথম আলো

ডায়রিয়া সাধারণত দু-এক দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। কয়েকটি কারণে রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। যেমন পানিশূন্যতা দেখা দিলে, ডায়রিয়ায় সঙ্গে বমি হলে, জ্বর হলে, পেটে ব্যথা হলে, পেট ফুলে গেলে এবং মলের সঙ্গে রক্ত গেলে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটা খুবই জরুরি।

বেশির ভাগ সময় ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডায়রিয়া যেহেতু খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে এবং খাবার গরম করে খেতে হবে। বাইরের খাবার বা পানীয় পরিহার করতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই বাড়ি থেকে পরিষ্কার বোতলে বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নিন। পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। ফ্রিজের খাবার অবশ্যই গরম করে খেতে হবে। খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি।

ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন: সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা