বাংলাদেশে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন

রক্তরোগজনিত জটিল রোগের চিকিৎসায় অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন (বিএমটি) বিশ্বজুড়ে বহুল পরিচিত একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। একসময় বাংলাদেশে এ চিকিৎসা ছিল স্বপ্নের মতো। তবে ২০১৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম সফল বিএমটি সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে এ খাতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

জীবন বাঁচানোর চিকিৎসা

বাংলাদেশে প্রতিবছর কয়েক হাজার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক থ্যালাসেমিয়া, লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়াসহ বিভিন্ন রক্তরোগে আক্রান্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ বা কেমোথেরাপি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে পারে না। তখন একমাত্র ভরসা হয় বিএমটি।

প্রতিটি সফল ট্রান্সপ্লান্ট মানে একটি জীবন বাঁচানো। বিশেষ করে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগে এটি স্থায়ী সমাধান।

কীভাবে কাজ করে

অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে প্রথমে রোগীর রুগ্‌ণ মজ্জা ধ্বংস করা হয় কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে। এরপর সুস্থ মজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয় রোগীর শরীরে। এ প্রক্রিয়ার দুটি ধরন রয়েছে—

অটোলগাস ট্রান্সপ্লান্ট: রোগীর নিজের সুস্থ স্টেম সেল প্রতিস্থাপন।

অ্যালোজেনিক ট্রান্সপ্লান্ট: দাতার স্টেম সেল ব্যবহার করে প্রতিস্থাপন।

অ্যালোজেনিক পদ্ধতিকে বেশি কার্যকর বলা হলেও এটি তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশের অবস্থা

২০১৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে প্রথমবারের মতো বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করা হয়। এর পর থেকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিতভাবে প্রতিস্থাপন কার্যক্রম চালু রয়েছে এবং এ পর্যন্ত দুই শতাধিক রোগীর সফল ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে। দেশে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের পর অনেক রোগীই এখন সুস্থ জীবন যাপন করছে।

ব্যয় ও সীমাবদ্ধতা

বিএমটি চিকিৎসা এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সরকারি হাসপাতালে এ খরচ ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা হলেও বেসরকারি হাসপাতালে ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকার বেশি লাগতে পারে।

এ ছাড়া দেশে এখনো পর্যাপ্ত দাতা রেজিস্ট্রি নেই। ফলে উপযুক্ত এইচএলএ ম্যাচড দাতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। পাশাপাশি প্রশিক্ষিত নার্স ও চিকিৎসক, আধুনিক ল্যাব ও আইসোলেশন ইউনিটও সীমিত।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

দাতা রেজিস্ট্রি গঠন, সরকারি ভর্তুকি ও স্বাস্থ্যবিমা চালু, নার্স ও চিকিৎসকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ এবং উন্নত প্রযুক্তি সংযোজন হলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিএমটি কেন্দ্র হতে পারে।

  • ডা. মো. কামরুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক, হেমাটোলজি বিভাগ ও বিএমটি ইউনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা