ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় বাড়ির যেসব জিনিস
স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের ঘরে থাকা কিছু সাধারণ ব্যবহার্য জিনিস দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি ‘নীরব ঘাতক’ সম্পর্কে।
আমরা এখন স্বাস্থ্যসচেতন। খাবারে চিনি কমাই, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলি, এমনকি ডিটক্স পানীয়ও খাই নিয়মিত। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, যে পাত্রে আমরা খাবার রাখছি বা যে মোমবাতি জ্বালিয়ে পরিবেশ সুন্দর করছি, সেসবই হয়তো আমাদের শরীরে নীরবে বিষ ঢালছে?
১. প্লাস্টিক কনটেইনার
খাবার সংরক্ষণে আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি প্লাস্টিকের পাত্র। কিন্তু এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে বিপিএ ও ফ্যালেটসের মতো রাসায়নিক, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং স্তন ও প্রজননতন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষত গরম খাবার বা তরল এতে রাখলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
২. ননস্টিক কুকওয়্যার
ননস্টিক পাত্রের পৃষ্ঠে ব্যবহৃত টেফলন উচ্চ তাপে পিএফওএ নামের বিষাক্ত গ্যাস নির্গত করে, যা লিভার, ফুসফুস ও থাইরয়েডের জন্য ক্ষতিকর এবং ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে অনেক গবেষণায় পাওয়া গেছে।
৩. অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল
ফয়েল দিয়ে গরম বা লবণযুক্ত খাবার মুড়ে রাখলে অ্যালুমিনিয়ামের কণিকা খাবারের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এটি স্নায়ু ও কোষের ক্ষতি ঘটিয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. পরিশোধিত তেল
ক্যানোলা, ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেল দেখতে হালকা হলেও এতে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয় উচ্চ তাপমাত্রায়। এটি কোষের ডিএনএর ক্ষতি করে, যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ।
৫. প্লাস্টিকের পানির বোতল
রোদে বা গরম স্থানে রেখে দিলে প্লাস্টিক বোতল থেকে বিপিএ ও মাইক্রোপ্লাস্টিক পানিতে মিশে যায়। ফলে এই পানি খেলে শরীরে হরমোনজনিত সমস্যা ও টিউমারের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
৬. ক্যানজাত খাবার
ক্যানের ভেতরের ধাতব প্রলেপে থাকে বিপিএ, যা খাবারে মিশে যায়। দীর্ঘদিন এসব খাবার খেলে লিভার ও প্রজনন কোষের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, যদি ক্যানজাত খাবার খানও, তাহলে লেবেলে ‘বিপিএ ফ্রি’ লেখা পণ্য বেছে নিন।
৭. সুগন্ধি মোমবাতি
আমরা অনেকেই ঘরে শিথিল পরিবেশ তৈরি করতে সুগন্ধি মোমবাতি ব্যবহার করি। কিন্তু এসব মোমবাতিতে থাকা প্যারাফিন পুড়লে বেনজিন ও টলুইন গ্যাস তৈরি হয়, যা ক্যানসারজনিত রাসায়নিক হিসেবে পরিচিত।
৮. প্লাস্টিকের কাটিং বা চপিং বোর্ড
দীর্ঘদিন ব্যবহারে কাটিং বা চপিং বোর্ডে সূক্ষ্ম দাগ হয়, সেখান থেকে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণিকা খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে জমে কোষের গঠন নষ্ট করতে পারে।
৯. আলট্রা প্রক্রিয়াজাত ফুড
চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস বা প্রক্রিয়াজাত মাংসে থাকে প্রচুর প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম রং ও ট্রান্সফ্যাট। এসব শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ তৈরি করে, যা ক্যানসারের ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
শেষ কথা
আমরা হয়তো এক দিনে সব বদলাতে পারব না, কিন্তু সচেতন হতে পারি আজ থেকেই। প্লাস্টিকের বদলে কাচ বা স্টিল ব্যবহার করুন, ননস্টিকের বদলে কাস্ট আয়রন বা সিরামিক পাত্র বেছে নিন এবং প্রাকৃতিক তেল ও তাজা খাবার খান।
ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা