ডায়াবেটিসে হাড় ও অস্থিসন্ধির সমস্যা

নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতন হোনপ্রতীকী ছবি

ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো হাড়, অস্থিসন্ধি, জয়েন্ট ক্যাপসুল বা আবরণী, লিগামেন্ট, টেনডন ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। এর ফলে দেখা দেয় নানা সমস্যা।

একটি পরিচিত সমস্যা হলো ফ্রোজেন শোল্ডার। এর ফলে কাঁধের পেশি ও টেনডনে প্রদাহ হওয়ায় ব্যথা করে, কাঁধের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি নাড়াতে সমস্যা হয়। চুল আঁচড়ানো, পেছনে বোতাম লাগানো বা পেছনের পকেটে কিছু নিতে সমস্যা হয়। অনেক সময় কাঁধ জমে যায় বলে মনে হয়।

আবার একিলিস টেনডিনাইটিস বা প্ল্যান্টার ফাসাইটিস নামের সমস্যায় পায়ের গোড়ালি এবং পায়ের পাতার পেশি ও টেনডনে প্রদাহ হয়। ফলে গোড়ালিতে ব্যথা করে। সকালে পা ফেলতে কষ্ট হয়। হাঁটতে, জগিং করতে বা দৌড়াতে কষ্ট হয়। আঙুল ও হাতের তালুর পেশি ও টিস্যু সংকুচিত হলে হঠাৎ আঙুল বাঁকা হয়ে যায়, আর সোজা করা যায় না। একে ট্রিগার ফিঙ্গার বলে।

হাত ও আঙুলের ত্বক মোমের মতো পুরু হয়ে যেতে পারে। পায়ের সন্ধিতে একটা জটিল সমস্যা হতে পারে—যার নাম চারকোট জয়েন্ট। এতে পায়ের জোড়া ফুলে যায়, স্থানচ্যুতি হয় ও স্বাভাবিকতা হারায়।

প্রতিকার

ডায়াবেটিসজনিত হাড় ও অস্থিসন্ধির সমস্যায় রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এ ছাড়া জীবনাচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে বেশির ভাগ সমস্যাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

● খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও চিকিৎসার মাধ্যমে সারা বছর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

● অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। শর্করাযুক্ত খাবার কমিয়ে শাকসবজি, ফলমূল, গোট খাদ্যশস্য, চর্বিহীন মাংস, মাছ, বাদাম, বীজজাতীয় খাবার খান।

● প্রয়োজন হলে জোড়ার ওপর চাপ কমাতে ওয়াকিং স্টিক, ব্রেচ বা হাঁটুর সাপোর্ট, নি ক্যাপ বা ইলাস্টিক সাপোর্ট, কোমরে বেল্ট ও কুশনযুক্ত জুতা ব্যবহার করা যায়।

● স্ট্রেনথনিং এক্সারসাইজ বা পেশি শক্তিকারক ব্যায়ামের মাধ্যমে সন্ধি জমে যাওয়া রোধ করা যায়।

● এর সঙ্গে নিয়মিত হাঁটা, জগিং ও ওজন বহন বা ব্যালান্সিং এক্সারসাইজ করে যাবেন।

● একটানা একই ভঙ্গিতে বা একটানা বসে থাকা উচিত নয়। সিঁড়ি ওঠা–নামা বেশি না করে বরং সমতল জায়গায় হাঁটাহাঁটি করুন।

● পরিমিত সুষম খাদ্য এবং ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খান।

● ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকবেন।

● ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে ব্যথা ও জমে যাওয়ার চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া চিকিৎসকের শেখানো ব্যায়াম বাড়িতে করবেন।

●চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক, ইন্ট্রাআর্টিকুলার ইনজেকশন ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে।