চিকুনগুনিয়ার ব্যথায় কী করবেন

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের একটি বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে, শরীর অনেক ব্যথা করেছবি: পেক্সেলস

দেশে সম্প্রতি চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ বেড়েছে। চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের একটি বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে, শরীর অনেক ব্যথা করে। বিশেষ করে, অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হয়ে ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া জিকা ভাইরাসসহ আরও কিছু ভাইরাসের প্রকোপ সম্প্রতি বেড়েছে, যেসব ক্ষেত্রে শরীরে ব্যথা হতে পারে। এ রকম ব্যথার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে নিজে থেকে কিছু অভ্যাস ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে শারীরিক ব্যথা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
১. শরীরচর্চা
বেশির ভাগ রোগী ব্যথার মাত্রা এত বেশি অনুভব করেন যে নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়। কিন্তু এ ব্যথাগুলোর ধরন হচ্ছে, বিশ্রামে থাকলে ব্যথা বেড়ে যায় আর শরীর সচল থাকলে ব্যথা কমে যায়। প্রথম দিকে হালকা ধাঁচের শরীরচর্চা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। পরে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, শারীরিক কসরতের মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে।
২. ওজন হ্রাস
শরীরের ওজন বেশি থাকলে অতিরিক্ত ওজনের চাপ ব্যথাকে বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে কোমর, হাঁটু, গোড়ালির ব্যথাগুলোকে অতিরিক্ত ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই যাঁদের ওজন তুলনামূলক বেশি, তাঁদের ব্যথা কমাতে ওজন কমানোর ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

৩. গরম সেঁক
এ ধরনের ব্যথাতে গরম সেঁক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে যে জায়গাগুলো জমে থাকে বা স্থবির হয়ে থাকে, সেসব জায়গায় গরম সেঁক দিলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে ব্যথা প্রশমিত হয়। প্রদাহের মাত্রা বেশি হয়ে গরম হয়ে ফুলে গেলে কোল্ড প্যাক দিতে হবে। তবে চিকিৎসক যেটি পরামর্শ দেবেন, সেটিই মেনে চলা ভালো।
৪. খাদ্যাভ্যাস
নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। ফল ও শাকসবজি প্রতিদিনের খাবারে বেশি থাকতে হবে। চিনিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত শর্করা কম খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা উচিত।
৫. মানসিক থেরাপি
এ ব্যথাগুলো মানসিক চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানসিক দুশ্চিন্তা, অবসাদ, হতাশা বাতব্যথা বাড়িয়ে দেয়। কিছু মানসিক থেরাপি যেমন, কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি মনকে প্রফুল্ল রাখে। এ ছাড়া মেডিটেশন করা যেতে পারে। ডিপ ব্রিদিং বা শ্বাসের ব্যায়াম করেও ব্যথা প্রশমন করা যায়।
৬. ধূমপান ও মদ্যপান
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান যেকোনো বাতব্যথা বাড়িয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। তাই এ ধরনের বদভ্যাস থাকলে তা পরিহার করা উচিত।
৭. নিয়মিত পানি পান
পানিশূন্যতা শরীরের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পানি নিয়মিত পান করাটা জরুরি।
৮. পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুম ঠিকমতো না হলে বাতব্যথা বেড়ে যায়। তাই সঠিক সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
৯. মেসেজ
হালকা ধরনের মেসেজ শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে কিছুটা ব্যথা প্রশমন করতে পারে।
মনে রাখতে হবে, এসব পদ্ধতি অনুসরণ করার পরও এসব ব্যথার জন্য বিশেষ কিছু ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে, যা শুরু না করা পর্যন্ত ব্যথা কমবে না। কোন ধরনের ওষুধ প্রয়োজন, তা একজন চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। তাই ব্যথার মাত্রা বেশি হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি