শিশুর জন্য প্লাস্টিকের ফ্লাস্ক কতটা নিরাপদ, একটা ফ্লাস্ক কত দিন ব্যবহার করা যাবে

প্রতিদিন ব্যবহারের পরপরই ফ্লাস্কের পানি ফেলে দিতে হবে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্লাস্টিকপণ্য পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। মানবদেহের জন্যও এসব পণ্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির ভয় আছে সব বয়সী মানুষেরই। তাই প্লাস্টিকের পানির ফ্লাস্কের বদলে কাচ বা ধাতব উপাদানে তৈরি ফ্লাস্ক ব্যবহার করেন অনেকে। তবে শিশুদের জন্য চাইলেও সব সময় এসব বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ হয় না। বিশেষ করে স্কুলে যাওয়ার সময় শিশুদের প্লাস্টিকের বোতলেই পানি বহন করতে হয়।

তবে শিশুকে যে প্লাস্টিকের ফ্লাস্কটি দিচ্ছেন, তা আদৌ শিশুর স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করছে কি না বা ফ্লাস্কটি কত দিন পর বদলে ফেলতে হবে, তা অনেক অভিভাবকেরই অজানা। কোন কোন পরিবর্তন দেখলে বোঝা যায়, ফ্লাস্কটি ফেলে দেওয়ার সময় হয়েছে, তা জেনে রাখা প্রয়োজন। কীভাবে ব্যবহার করলে ফ্লাস্কটি লম্বা সময়ের জন্য নিরাপদে ব্যবহারোপযোগী থাকবে, এ ব্যাপারেও জেনে নিন। প্লাস্টিকের ফ্লাস্কে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকির নানান দিক সম্পর্কে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান।

আরও পড়ুন
গঠনগত দিক থেকে প্লাস্টিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক নিঃসরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

কত দিন পর্যন্ত একটি ফ্লাস্ক ব্যবহার করা যাবে

শিশুর জন্য ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত একটি ফ্লাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই সময়ের আগেই যদি ফ্লাস্কের ভেতরের দিকের রং বা স্বচ্ছতা নষ্ট হয়ে যায়, ফ্লাস্কটি ক্ষয়ে যায় কিংবা চিড়ে যায়, তাহলে তা তখনই বাতিল করে দিন। গঠনগত দিক থেকে প্লাস্টিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক নিঃসরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যেভাবে নিরাপদে ব্যবহার করা যাবে

শিশুর পানির ফ্লাস্কটি প্লাস্টিকের হলে বাইরে যাওয়ার সময় পানি ভরে নিয়ে ফ্লাস্কের মুখ ভালোভাবে আটকে দিন। এরপর সেটি তার ব্যাগের ভেতরের অংশে দিয়ে দিতে পারেন। কিংবা পুরু কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে ব্যাগের বাইরের দিকের পকেটে বা শিশুর হাতে দিতে পারেন। তাহলে যাতায়াতের পথে ফ্লাস্কটি গরম হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমবে। না হলে গরমে বা রোদের তাপে প্লাস্টিকের পাত্র থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত হয়ে পানিতে মিশে যেতে পারে।

  • প্রতিদিন ব্যবহারের পরপরই ফ্লাস্কে রয়ে যাওয়া পানি ফেলে দিতে হবে।

  • পানি ফেলে দেওয়ার পর ভালোভাবে প্লাস্টিকের ফ্লাস্কটি পরিষ্কার করুন। নইলে ফ্লাস্ক থেকেই জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। অনেক ফ্লাস্ক আছে, যেসবের মুখ সরু আবার কোনো ফ্লাক্সের ভেতরে খাঁজ থাকে। এসব পরিষ্কার করতে হয় খুব যত্নের সঙ্গে, যাতে ফ্লাস্কের ভেতরটাসহ সব অংশ পরিষ্কার হয়ে যায়। ফ্লাস্কের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করতে ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন।

  • ধোয়ার পর ফ্লাস্ক ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।

শিশুর জন্য ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত একটি ফ্লাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

কেনার সময়

ভালো মানের প্লাস্টিকপণ্য কিনুন। পানীয় রাখার জন্য এমন পাত্র বেছে নিন, যাতে বিসফেনল এ (বিপিএ, একটি রাসায়নিক যৌগ যা প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়) নেই। এ ছাড়া প্লাস্টিকপণ্যের গায়ে একটি সংখ্যা থাকে। একে বলা হয় রেজিন আইডেনটিফাই কোড। পণ্যের গায়ে এক থেকে সাত পর্যন্ত যেকোনো সংখ্যা দেখতে পেতে পারেন আপনি। পানীয় রাখার জন্য তিন, ছয় ও সাত লেখা পণ্য নেবেন না। কারণ, প্লাস্টিকের যে ধরন দিয়ে এই পণ্যগুলো তৈরি করা হয়, সেসব পুনর্ব্যবহারের জন্য তুলনামূলক বেশি অনিরাপদ। অন্য কোনো সংখ্যা লেখা থাকলে তা নিন।

ফেলে দেওয়ার সময়

যত প্লাস্টিকপণ্য আপনি ফেলে দেবেন, ততই পরিবেশের ক্ষতি হবে। আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পর প্লাস্টিকপণ্য বাতিল না করেও তো উপায় নেই। তাই প্লাস্টিকপণ্যের বিকল্প খোঁজাই সবচেয়ে ভালো। বিকল্প না পেলে প্লাস্টিকপণ্য ব্যবহার শেষে তা অন্য কাজে লাগাতে পারেন। যেমন ব্যবহৃত একটি ফ্লাস্ক দিয়ে সুন্দর কলমদানি বা ছোট গাছের টব তৈরি করতে পারেন।

আরও পড়ুন