অ্যানোমালি স্ক্যানে কি ভয়ের কিছু আছে

প্রত্যেক মা–বাবার কাছে একটি সুস্থ সন্তান একান্ত কাম্য। বর্তমানে গর্ভস্থ শিশুর গঠন, বিকাশ ও বৃদ্ধি প্রায় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে বোঝা যায়। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টারে বা দ্বিতীয় তিন মাসের পর্যায়ে যে আলট্রাসনোগ্রাম স্ক্যানটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো অ্যানোমালি স্ক্যান।

এই স্ক্যানের মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর গঠনগত কোনো ত্রুটি আছে কি না, তা দেখার চেষ্টা করা হয়। একই সঙ্গে সঠিকভাবে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি হচ্ছে কি না, তা–ও দেখা হয়।

অ্যানোমালি স্ক্যান করতে বড়জোর ৩০-৪০ মিনিট লাগে। তবে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। চিকিৎসকেরা অন্তঃসত্ত্বা নারীর তৃতীয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর অ্যানোমালি স্ক্যান করতে অভিজ্ঞ সনোলজিস্টের কাছে পাঠিয়ে থাকেন।

পূর্বপ্রস্তুতি কী

কোনো পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। প্রস্রাবের বেশি চাপেরও প্রয়োজন নেই। ঢিলেঢালা পোশাক পরে যান। এই স্ক্যানের জন্য দুটি জিনিস প্রয়োজনীয়। এগুলো হলো অত্যাধুনিক মেশিন আর একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ চিকিৎসক। এই দুইয়ের সমন্বয়ে সফলভাবে স্ক্যান করা সম্ভব।

অন্যান্য প্রেগন্যান্সি প্রোপাইল স্ক্যানের মতোই রোগীকে বেডে শুইয়ে ত্বকে জেল দিয়ে আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। গর্ভস্থ শিশুর শরীরের প্রতিটি অঙ্গ খুঁটিয়ে পরীক্ষা এবং তা লিখে রাখতে হয় বলে বেশি সময় লাগে।

স্ক্যানে কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে

এক্স-রে, সিটি স্ক্যানজাতীয় পরীক্ষায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রঞ্জনরশ্মি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আলট্রাসনোগ্রামে ব্যবহৃত হয়ে থাকে শব্দতরঙ্গ, যার কোনো ক্ষতিকর দিক এখনো পাওয়া যায়নি। ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে এই আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হচ্ছে। ১০ কোটির বেশি গর্ভবতী মায়ের ওপর পরীক্ষাটি করে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় শিশুর ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পাওয়া যায়নি।

অ্যানোমালি স্ক্যানে কি সব বোঝা যায়

এই স্ক্যানের ফলাফল মোটামুটি নির্ভুল হলেও সব সময় শিশুর অস্বাভাবিকতা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, এই স্ক্যানের মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ স্পাইনা বাইফিডা, ৮০ শতাংশ ক্লেফট লিপ বা প্যালেট এবং ৬০-৭০ শতাংশ জন্মগত হার্টের সমস্যা শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া ৫০-৬০ শতাংশ ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি সম্পর্কে (জিনগত ত্রুটি) সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

স্ক্যান করতে দিলে ভয়ের কিছু নেই

অনেকেই অ্যানোমালি স্ক্যান করতে দিলে ভীত হয়ে পড়েন। ভাবেন, নিশ্চয় আমার শিশুর সমস্যা আছে, নয়তো এই পরীক্ষা কেন করতে দেবে? আসলে বর্তমানে এটি রুটিন টেস্ট। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুস্থ–স্বাভাবিক শিশু পাওয়া যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে কোনো সমস্যা চিহ্নিত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

  • ডা. সাজেদা রুমানা আহমেদ, কনসালট্যান্ট সনোলজিস্ট, আলোক, হেলথকেয়ার লি., কচুক্ষেত, ঢাকা