বয়স ২ হওয়ার আগেই ছড়া বা গান মুখস্থ করে ফেলা কি ঠিক?

শিশু বড় হলে তার কেমন বৈশিষ্ট্য হবে, সেটার ভিত্তি তৈরির জন্য প্রথম পাঁচ বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ
ছবি: পেক্সেলস

শিশু জন্মের পর বিকাশের বিভিন্ন ধাপ পার করে একসময় পূর্ণবয়স্ক মানুষে পরিণত হয়। শিশু বড় হলে তার কেমন বৈশিষ্ট্য হবে, সেটার ভিত্তি তৈরির জন্য প্রথম পাঁচ বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুর জন্মের পর প্রথম এক হাজার দিন। এই সময়ের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি স্নায়ুসংযোগ হয়ে থাকে। এ সময় শিশু দাঁড়ানো, হাঁটা, দৌড়ানো, কথা বলা, কানে শোনা, যোগাযোগ স্থাপন ইত্যাদি শেখে যা পরবর্তী ধাপের বিকাশে কাজে লাগে।

জন্মের পর শিশুর প্রথম যোগাযোগ হয় মায়ের সঙ্গে। তাদের যোগাযোগের প্রথম ভাষা হলো কান্না, এরপর হাসি। সাধারণত ছয় সপ্তাহের দিকে বাচ্চা মায়ের সঙ্গে চোখাচোখি হলে হাসে, এ রকম করে মায়ের সঙ্গে হাসতে হাসতে, মায়ের মুখে গল্প–ছড়া শুনে সে–ও ধীরে ধীরে আধো আধো বোল শেখে। এরপর অর্থবোধক শব্দ, শব্দ জোড়া দিয়ে বাক্য বলতে শেখে। একসময় বাচ্চা নিজেই বানিয়ে গল্প বলতে শিখে যায়!

বাচ্চার মন ভোলানোর জন্যে বলা কবিতা–গল্পগুলো সাদা চোখে খুব সাধারণ মনে হলেও দ্বিমুখী যোগাযোগ শেখানোর জন্যে বেশ শক্ত ভূমিকা রাখে।

অনেক সময় দেখা যায় যে শিশু দুই বছরের আগেই অনেক কবিতা শিখে ফেলছে। এটা তার কল্পনাশক্তি বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। বারবার বলা গল্প ও কবিতা শিশুর কথা বলা, স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, চিন্তাশক্তি, বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। শিশুদের ছড়া বা রাইমগুলো এমনভাবে তৈরি যে এগুলো বলতে শিশুরা আনন্দ পায়। এগুলোর মাধ্যমে শিশুর শোনার অভ্যাসও তৈরি হয়। এগুলো শিশুর শব্দভান্ডার বাড়ায়। ছড়ার ছন্দের বিভিন্ন ধরন, স্বরের ভিন্নতা শিশুর আবেগ–অনুভূতি প্রকাশে সাহায্য করে। যখন শিশু এসব ছড়া বলতে পারার জন্যে প্রশংসিত হয়, তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়, যা পরবর্তী জীবনেও অনেক কাজে সাহায্য করে। শিশু যখন কোনো কবিতা, গান বা গল্প বলে, মায়ের খুশির অন্ত থাকে না।

এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন:

• শিশু যে ছড়া, গান বা কবিতা বলছে, সেটা নিজের জগতে একা একা বলছে কি না
• ছড়া বা গান বলার সময় সামনে উপস্থিত ব্যক্তির চোখে চোখ রাখছে কি না
• শিশু গান বা ছড়ার মতো যেটা বলছে, সেটা যোগাযোগ স্থাপন করার মত যথেষ্ট অর্থবোধক কি না
• কোনো ছড়া বা কবিতা শোনার পর শিশু একই জিনিস বারবার পুনরাবৃত্তি করছে কি না, অথবা একই কথা বারবার বলছে কি না
• শিশুর অন্য কোনো অস্বাভাবিক আচরণ যেমন অতি চঞ্চলতা, অস্থিরতা, অমনোযোগিতা আছে কি না
• সারিবদ্ধভাবে খেলনা সাজানো, কোন জিনিস বা নিয়মের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি দেখাচ্ছে কি না

• কোনো শব্দ হলে কান ধরে কাঁদা অথবা কোনো শব্দের প্রতি অস্বাভাবিক আকর্ষণ আছে কি না
• আনন্দিত হলে অথবা রেগে গেলে হাত দিয়ে অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি করার অভ্যাস আছে কি না
• অনেক শিশুর সঙ্গে থাকলেও নিজের মতো একা একা খেলা, নিজে নিজে কথা বলার অভ্যাস আছে কি না


• পুরোপুরি হাঁটা শিখে যাওয়ার পর মাঝেমধ্যে পায়ের পাতায় ভর দিয়ে হাঁটে কি না
শিশু দুই বছরের ভেতর নিজে নিজেই ছড়া–কবিতা শিখে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি এসব লক্ষণও দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ, স্নায়ুর বিকাশের বিভিন্ন সমস্যায় এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া শিশুদের জন্যে ছড়া, কবিতা, গান গাইতে শেখা স্বাভাবিক বিকাশেরই অংশ।


ডা. ফারাহ দোলা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর