শিশুর মাথাব্যথার কারণ

শিশুরাও মাঝেমধ্যে তীব্র মাথাব্যথার অভিযোগ করে থাকে। মাথাব্যথার উপসর্গের জন্য প্রায়ই তারা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। অন্যদিকে শিশুদের মাথাব্যথায় অভিভাবকেরা ঘাবড়ে যান। আসুন দেখা যাক, শিশুর মাথাব্যথার পেছনে কী ধরনের কারণ থাকে।

  • তীব্র মাথাব্যথা (একিউট হেডেক): বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্বর বা কোনো সংক্রামক রোগে ভোগার সময় তীব্র মাথাব্যথা হয়ে থাকে। যেকোনো ভাইরাস জ্বরে মাথাব্যথা হতে পারে, কিন্তু জ্বর ও মাথাব্যথা উপসর্গ নিয়ে আসা শিশুরোগীদের ব্রেনের মেনিনজাইটিস-এনকেফালাইটিস সংক্রমণে ভুগছে কি না, তা দ্রুত খতিয়ে দেখা দরকার। বিশেষত আলোর দিকে তাকাতে না পারা, অস্বাভাবিক আচরণ, কোমা, শরীরে র‌্যাশ, খিঁচুনি—এসব উপসর্গ গুরুতর। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত।

  • বারবার মাথাব্যথা (রিকারেন্ট হেডেকস): মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ ছেলে ও ৯৩ শতাংশ মেয়ে ‘বারবার মাথাব্যথা’র সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে পারে। এদের বেশির ভাগে কোনো ক্ষতিকর কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার ৩-৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মাইগ্রেন বারবার মাথাব্যথার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

  • মাইগ্রেন: ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেনে পরিবারের ইতিহাস থাকে। মাথাব্যথা, বমি, চোখেÑঝাপসা দেখা, ফ্লাশিং লাইটস দেখা ইত্যাদি থাকে। খাবারÑচকলেট, পনির, ক্যাফেইন, অতিরিক্ত ক্ষুধা, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা বিষম ক্লান্তি এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম করা উচিত।

  • সাইনোসাইটিস: সাইনোসাইটিস থাকলে শিশুর ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা বা সর্দিতে ভোগার ইতিহাস থাকে। সাইনাসের এক্সরে করানো হলে সমস্যা ধরা পড়ে। সংক্রমণ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রপস ব্যবহার করা যাবে।

  • চোখের সমস্যায় বিদ্যালয়গামী শিশুর নিয়মিত চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • মস্তিষ্কের কোনো অসুখ: যদি মাথাব্যথার তীব্রতার কারণে শিশুর ঘুম ভেঙে যায়, প্রতিদিন সকালে বারবার শিরঃপীড়ার আক্রমণ হয়, শিশু যথাযথ বাড়ছে না বা নিউরোলজিক্যাল লক্ষণ দেখা যাচ্ছে অথবা খিঁচুনি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কী করবেন

  • চিকিৎসক রোগের ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষার পর শিশুর গ্রোথ চার্ট, চোখ, রক্তচাপ, দাঁতের সমস্যা ও সম্পূর্ণ নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা করবেন। সঙ্গে দরকারমতো বিশেষ ল্যাবরেটরি টেস্ট। মাইগ্রেন হয়ে থাকলে পুরো বিষয়টি মা-বাবা ও শিশুকে বুঝিয়ে বলতে হবে এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়।

  • চোখে বা দাঁতে সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা করতে হবে। তবে সন্দেহজনক উপসর্গ থাকলে ব্রেনের সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা দরকার পড়তে পারে। যেকোনো মাথাব্যথায় প্রথম দিকে প্যারাসিটামল ও বিশ্রাম সুফল দেয়।

  • অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল