ভেগান বা ভেজিটেরিয়ানদের কি প্রোটিনের অভাব হতে পারে, হলে কী করবেন
সাধারণভাবে প্রোটিন বা আমিষের উৎস হিসেবে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের কথাই বলা হয়। তবে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা মাছ-মাংস খান না, অর্থাৎ ভেজিটেরিয়ান। আবার যাঁরা ভেগান, তাঁরা মাছ-মাংস তো বাদ দেনই, ডিমও খান না। ভেগানদের মধ্যে কেউ কেউ আবার প্রাণীর দুধও খান না। এমন জীবনধারায় কি প্রোটিনের অভাব হতে পারে? এ বিষয়ে রাফিয়া আলমকে জানালেন টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান।
প্রোটিনের ধরন ও পরিমাণ
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক প্রোটিনের দুটি আলাদা ধরন সম্পর্কে। প্রাণীজ উৎস থেকে যে প্রোটিন পাওয়া যায়, তা হলো প্রথম শ্রেণির প্রোটিন। অর্থাৎ এসব খাবার থেকে দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের সবই পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ উৎসের প্রোটিনগুলো দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন। অর্থাৎ এসবে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের কোনো না কোনোটির ঘাটতি থাকে। তবে এ ঘাটতি মেটাতে আপনি একই সঙ্গে বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন।
এ কারণে খিচুড়ি ও হালিম তৈরির সময় মাংস ব্যবহার না করলেও বিভিন্ন রকম শস্যদানা থাকার কারণেই আপনি সব অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড পেয়ে যাবেন।
তবে প্রোটিনের পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিজের প্রতি কেজি ওজনের জন্য এক গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন।
অর্থাৎ কারও ওজন ৬০ কেজি হলে তাঁর রোজ অন্তত ৬০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। কোন খাবার কী পরিমাণে খেলে, তা থেকে কতটা প্রোটিন পাবেন, সে বিষয়েও তাই ধারণা থাকতে হবে।
যাঁরা মাছ-মাংস খান না
ভেজিটেরিয়ানদের কথায় আসা যাক। মাছ ও মাংস না খেলেও প্রাণীর দুধ আর ডিম থেকে তাঁরা রোজকার প্রোটিনের চাহিদার অনেকটাই মিটিয়ে নিতে পারেন। এক গ্লাস দুধ থেকে ৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। একটা বড় ডিম থেকে পাওয়া যায় ৬ গ্রাম প্রোটিন।
দুধ ও ডিম দিয়ে তৈরি করা নানা খাবার খেতে পারেন তাঁরা। অন্যান্য উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে বাকি প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন অনায়াসেই। ছানার বড়া, পনির বা ডিমের সঙ্গে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন যোগ করেও খেতে পারেন। তাতে যেমন প্রোটিনের পরিমাণ বাড়বে, তেমনি ওই উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মানও বাড়বে।
কোনো প্রাণীজ প্রোটিন না খেলে
মাছ, মাংস, ডিম, দুধ—কোনোটিই না খেলেও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। ভেগানরা সয়া, টোফু, নানা রকম ডাল, বাদাম ও বীজ এবং বিভিন্ন সবজি থেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন। সয়া দুধও খান কেউ কেউ।
১০০ গ্রাম সয়া থেকে অন্তত ৩০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। এক গ্লাস সয়া দুধে ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ১০০ গ্রাম টোফু থেকে ৪ গ্রামের একটু বেশি প্রোটিন মিলবে।
রাজমা ও নানা রকম শিমের বীজ, মটরদানা, মসুর ডাল, চানা বুট, ডাবলি প্রভৃতির প্রতি ১০০ গ্রাম থেকে অন্তত ৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। তবে ডাল পাতলা করে রান্না করলে প্রোটিনের পরিমাণ কম হবে। অন্যান্য অনেক ধরনের বীজ ও বাদামের প্রতি ৩০ গ্রাম থেকে পাওয়া যায় ৪ গ্রামের বেশি প্রোটিন।
রান্নার পর প্রতি ১০০ গ্রাম কিনোয়ায় ৪ গ্রামের বেশি প্রোটিন থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা ওটসে থাকে ৩ গ্রামের মতো প্রোটিন। পালংশাক, মিষ্টি আলু, ব্রকলি, কলা, পেয়ারা প্রভৃতি থেকেও কিছুটা প্রোটিন পাওয়া যায়। বুঝতেই পারছেন, বুঝেশুনে খেলে কেবল উদ্ভিজ্জ উৎস থেকেও প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব।