হেপাটাইটিস প্রতিকারে দেরি নয়

ভাইরাল হেপাটাইটিস বিশ্বজুড়ে একটি বড় সমস্যা। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অথচ সবাই সচেতন হলে একে রুখে দেওয়া সম্ভব। ভাইরাল হেপাটাইটিসের কারণ হিসেবে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস আমাদের কাছে পরিচিত। এর বাইরেও আরও কিছু ভাইরাস আছে, যেগুলো হেপাটাইটিস বা যকৃতে প্রদাহ ঘটাতে পারে।

হেপাটাইটিস এ: এ ভাইরাসের মাধ্যমে সাধারণত শিশু–কিশোরেরা আক্রান্ত হয়। এটি পানি ও খাবারবাহিত। বেশির ভাগ সময় এর উপসর্গ মৃদু হয়। যেমন অরুচি, বমি, চোখ বা প্রস্রাব হলুদ হওয়া ইত্যাদি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ভাইরাসজনিত হেপাটাইটিস এক-দুই মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যায়। তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধের জন্য টিকা আছে।

হেপাটাইটিস বি: এটি সাধারণত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া একই সিরিঞ্জ অনেকে ব্যবহার করলে বা অনিরাপদ যৌনমিলনের ফলে ছড়াতে পারে। এর স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি—দুই রকম সংক্রমণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ থেকে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার হতে পারে। হেপাটাইটিস বি–এর কার্যকর টিকা আছে।

হেপাটাইটিস সি: এটিও রক্তবাহিত। অনিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন মূলত এ রোগের কারণ। এর ফলে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয়। তবে মাঝেমধ্যে স্বল্পমেয়াদি ইনফেকশনও দেখা যায়। এ রোগের কার্যকর চিকিৎসা আছে। এ ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশনের ফলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার হতে পারে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো কার্যকর টিকা নেই।

হেপাটাইটিস ডি: এটি সাধারণত হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সঙ্গে হয়ে থাকে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন হলে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার। এ ভাইরাসের কোনো টিকা এখনো নেই।

হেপাটাইটিস ই: এ ভাইরাস পানি ও খাদ্যবাহিত। সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ইনফেকশন হয়। উচ্চমাত্রার জন্ডিস হয়। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার দরকার হতে পারে। গর্ভকালীন আক্রান্ত হলে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যা করতে হবে

● যেকোনো পরিস্থিতিতে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। পানি ফুটিয়ে খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।

● যেখানে সেখানে খাবার খাওয়া যাবে না।

● মাদকমুক্ত থাকতে হবে।

● অবশ্যই নিরাপদ রক্ত নিতে হবে।

● অনিরাপদ যৌনমিলন এড়িয়ে চলতে হবে।

● যেসব ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা আছে, সেগুলো নিয়ে নিতে হবে।

● জন্ডিস হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল