আপনার শিশুর স্নায়ুর ক্ষয়জনিত রোগ নেই তো? এই লক্ষণগুলো খেয়াল রাখুন

শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে
ছবি : অধুনা

বয়স বাড়ার সঙ্গে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ—দুটিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শিশুর ওজন বৃদ্ধির দিকে যতটা নজর দেওয়া হয়, বিকাশের দিকটা শুরুতে অতটা আমলে নেওয়া হয় না। আর শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ যেহেতু খুব সুস্পষ্টভাবে চোখে পড়ে না, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাই এর ব্যত্যয়ও নজরে আসে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বিকাশের হার বিভিন্ন শিশুর ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে, কিন্তু এর ক্রম সব বাচ্চারই এক। যেমন কোনো শিশু ঘাড় শক্ত হওয়ার আগেই বসতে বা হাঁটতে শিখবে না।

বিকাশের ধাপগুলো দেরিতে শেখার মাধ্যমে শিশুর কিছু রোগ প্রকাশ পায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়, যা শিখেছে, তা হঠাৎ করে অথবা আস্তে আস্তে ভুলে যাওয়ার মাধ্যমে। সাধারণত দেখা যায় জ্বর বা কোনো ইনফেকশনের পর এ রকম হচ্ছে। শিশু হয়তো আগে হাঁটতে পারত, কথা বলতে পারত, হাসত; এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশু ঘাড়ও শক্ত করে ধরে রাখতে পারছে না, মায়ের দিকে তাকাচ্ছে না, কথাও ভুলে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের সমস্যাকে এখনো বাতাস লাগা, জিনের আসর বা খারাপ নজর লাগা মনে করে অনেক সময়ই এই শিশুদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় না। এ ধরনের রোগকে নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ বা বাংলায় স্নায়ুর ক্ষয়জনিত রোগ বলা হয়ে থাকে। বড়দের ক্ষেত্রে এই ধরনের রোগের হার বেশি, তবে শিশুদেরও নেহাত কম হয় না।

বয়স আর উপসর্গভেদে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ আছে। কোনো কোনোটি একদম নবজাতক অবস্থায় প্রকাশ পায়, কোনোটি অনেক অল্প বয়সে শুরু হলেও পূর্ণভাবে প্রকাশ পেতে পেতে বয়ঃসন্ধিকাল বা তারও বেশি লেগে যায়।

দ্রুত শনাক্ত করার মাধ্যমে শিশুর জীবনযাত্রা অনেক ক্ষেত্রেই সহনীয় করা যায়। এ জন্য বেশ কিছু বিপদচিহ্ন অভিভাবকদের নজরে রাখতে হবে, যেগুলো প্রকাশ পাওয়ামাত্রই দ্রুত শিশুবিশেষজ্ঞ, বিশেষত শিশু নিউরোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

এগুলো হলো—

  • জন্মের পর থেকে বাচ্চার অস্বাভাবিক নরম অথবা শক্ত হয়ে থাকা

  • খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, দুর্বল ভাব, অতিরিক্ত বমি।

  • মাথার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বা ছোট থাকা।

  • একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা, কোনো শব্দ বা পরিচিত কারও আহ্বানে সাড়া না দেওয়া।

  • কথাবার্তা, দৃষ্টি বা শ্রবণশক্তি, চলাফেরা কমতে থাকা বা একদম চলে যাওয়া।

  • আগের অর্জিত সব শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলা।

  • হাত বা পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া, বেঁকে যাওয়া, ঝাঁকুনি বা কাঁপুনি।

    এসব রোগের কোনো কোনোটা জেনেটিক, কোনোটা আবার স্নায়ুর বিভিন্ন সংক্রমণের কারণে হতে পারে। কোনো কোনোটার কার্যকর চিকিৎসা এখনো সে রকমভাবে নেই, কিন্তু সঠিক সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে বেঁচে থাকাকে সহনীয় করা যায়।

ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর