আলিয়ার এই অসুখ আপনারও নেই তো?

কদিন আগেই ভারতীয় তারকা আলিয়া ভাট জানিয়েছেন, তিনি অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডারে (এডিডি) ভুগছেন। এই রোগটি আসলে কী? কীভাবে হতে পারে এর প্রতিকার?  

প্রতীকী ছবি
ছবি: পেক্সেলস

অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডার একধরনের ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার’ (এডিএইচডি), যেখানে চঞ্চলতার চেয়ে মনোযোগহীনতার তীব্রতা বেশি থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে যখন এই মনোযোগহীনতার সমস্যা দেখা দেয়, তখন তারা স্কুলের ব্যাগ গোছানো থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারে না। সাধারণত শৈশবেই এডিডি (এডিএইচডি) শনাক্ত করা যায়। মা-বাবা বা স্কুলের শিক্ষক সবার আগে এ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারেন। এই সমস্যা থাকলে যা হয়, তা হলো কোনো কিছুর প্রতি বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, সারাক্ষণ ছোটাছুটি করা, চিন্তাভাবনা না করে হঠাৎ কিছু করে ফেলা, স্থির বসে থাকতে না পারা, বই-কলম প্রায়ই হারিয়ে ফেলা, লাফিয়ে উঁচুতে উঠে যাওয়া, প্রশ্ন শোনার আগেই জবাব দেওয়া, পড়ালেখা বা খেলাধুলাতেও মনঃসংযোগ রাখতে না পারা। বড়দের কাজ বা কথার মাঝে ক্রমাগত বাধা দিতে থাকে এরা। একসঙ্গে অনেক কিছু করার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনোটাই ঠিকঠাক শেষ করে না।

কীভাবে বুঝবেন

এডিডি অর্থাৎ এডিএইচডির এই ধরনটি শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক যে কারও মধ্যে থাকতে পারে। মূল লক্ষণগুলো হচ্ছে—

  • সহজেই এক বিষয় থেকে আরেক বিষয়ে মনোযোগ চলে যাওয়া, কোনো কিছুতে

  • বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা।

  • কোনো নির্দেশনা সহজে বুঝতে ও পালন করতে অসুবিধা হওয়া।

  • ভুলে যাওয়ার প্রবণতা।

  • নিজের জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা।

  • যেসব বিষয়ে বিশদ মনোযোগ দিতে হয়, যেমন গণিত, সূচিকর্ম—এগুলো ভালো না লাগা।

  • কোনো কিছু গুছিয়ে, পরিকল্পনা করে করতে না পারা।

  • অনেক সময় মনে হয়, তাঁরা আশপাশের মানুষের বলা কথা শুনছেন না।

  • স্থির বসে থাকতে না পারা।

  • পড়ালেখা, এমনকি খেলাধুলাতেও মনোযোগ রাখতে না পারা।

তবে যেকোনো সাধারণ মনোযোগহীনতাই এডিডি নয়। যদি কমপক্ষে ছয় মাস ধরে এই মনোযোগহীনতা থাকে এবং এর কারণে পড়ালেখা বা দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হয়, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে, তখন তাকে এডিডি বলা যেতে পারে। তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই এডিডির লক্ষণগুলো শৈশবেই দেখা দেয়।

কেন হয় এডিডি

এ সমস্যার সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটি একধরনের স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা। সাধারণত কিছু বিষয়কে এডিডি হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

  • বংশানুগতিক: বংশে কারও যদি এডিএইচডি থাকে।

  • মস্তিষ্কে আঘাত: জন্মের সময় বা জন্মের পরপরই যদি শিশু মাথায় আঘাত পায়।

  • পরিবেশগত: গর্ভাবস্থায় মা যদি এমন জায়গায় বসবাস করেন, যেখানকার বাতাসে ভারী ধাতু (যেমন সিসার পরিমাণ) বেশি। টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন থেকে বাতাসে সিসার পরিমাণ বাড়তে পারে।

  • অপরিণত শিশু: সময়ের আগেই যদি কোনো কারণে শিশু জন্মগ্রহণ করে (প্রিম্যাচিউর বেবি)।

  • ওজন কম: জন্মের সময় যদি শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে।

  • ধূমপান: গর্ভাবস্থায় মা যদি ধূমপান বা মদ্যপান করে থাকেন।

কী করবেন

  • যদি কারও মধ্যে মনোযোগহীনতার লক্ষণ থাকে, তাহলে একজন মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

  • নিজের জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন। বাড়ির সবাই সঠিক নিয়ম মেনে চলুন। যেমন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো, সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া ও খেলার সময়ে খেলা ইত্যাদি।

  • কোনো নির্দেশ পেলে সেটিকে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
    এডিডি আছে এমন ব্যক্তির ভালো কাজের প্রশংসা করুন, প্রয়োজনে পুরস্কৃত করুন।

  • খাদ্যতালিকায় কৃত্রিম রং ও মিষ্টির পরিমাণ কমিয়ে তাজা ফলমূল যুক্ত করুন।

হেলাল উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট