স্তনে চাকা মানেই কি ক্যানসার

মেয়েরা যেসব ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, তার মধ্যে স্তন ক্যানসার শীর্ষে। এ তথ্য সচেতন হওয়ার জন্য জানা দরকার। তবে আতঙ্কগ্রস্ত যেন না হই। নারীরা স্তনে একটু ব্যথা হলে, কোনো চাকা হলে, সিস্ট হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। আসুন আমরা আগে স্তনের টিউমার বা চাকা সম্পর্কে জানি।

স্তনের টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা অস্বাভাবিক টিস্যুতে পরিবর্তিত হয়ে যখন পিণ্ডের আকার ধারণ করে, সেটিকে স্তনের টিউমার বলা হয়। চাকা যদি কম বয়সে হয়, স্তনের মধ্যে নড়াচড়া করে এবং কোনো ব্যথা না করে তাহলে আশা করা যায়, এটি হয়তো ফাইব্রোএডেনোমা বা নিরীহ এক ধরনের টিউমার। যদি টিউমারটি ফোড়া বা সংক্রমণজনিত হয়, তাহলে চাকার সঙ্গে ব্যথা থাকবে আর চামড়া লাল হয়ে যেতে পারে।

যদি টিউমারটি খারাপ ধরনের হয়, অর্থাৎ ক্যানসার হয়, তাহলে সেটি খুব দ্রুত বড় হতে থাকে, চামড়ায় পরিবর্তন আসা শুরু করে, বগলেও চাকা আসতে পারে। কখনো কখনো নিপল দিয়ে রক্ত বা লালচে পানি আসতে পারে।

এসব ছাড়াও সিস্ট, হরমোনের কারণে টিউমার হতে পারে।

কী করবেন

যেকোনো রকম অস্বাভাবিকতা, চাকা বা পিণ্ড অনুভূত হলে দেরি না করে অবশ্যই একজন সার্জারি–বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন। তিনি হাত দিয়ে পরীক্ষা করে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা বা ম্যামোগ্রাফি (যদি বয়স ৩৫–এর বেশি হয়) অথবা দুটোই করতে দিতে পারেন। প্রয়োজনে কোর বায়োপসি বা এফএনএসি (সিরিঞ্জ দিয়ে টিউমার থেকে সেল নিয়ে এক ধরনের পরীক্ষা) করতে দিতে পারেন। আপনার হরমোনজনিত সমস্যা আছে কি না, সেটাও পরীক্ষা করতে দিতে পারেন।

কোর বায়োপসি কি করাই লাগবে

যদি চিকিৎসক পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই কোর বায়োপসি করতে হবে। এতে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই যে বায়োপসি করালে টিউমার ক্যানসার হয়ে যাবে বা ছড়িয়ে যাবে; বরং বায়োপসি পরীক্ষা করালেই আপনি সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। যদি ক্যানসার থাকে, সেটি ধরা পড়বে ও চিকিৎসা করালে আপনি ভালো হয়ে যাবেন।

টিউমার হলেই কি অস্ত্রোপচার করতে হবে

যদি স্তন ক্যানসার ছাড়া অন্য কোনো কারণে টিউমার হয় এবং সেটি আকারে ২ সেমির বড় হয় বা ক্রমাগত বড় হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সেটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দূর করতে পারেন। যদি ফোড়া বা অন্য কোনো কারণে টিউমার হয় ও ওষুধ খেলেও টিউমার ছোট না হয় বা দীর্ঘ সময়েও না সারে, সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে ফেলা ভালো। তবে ছোট সিস্ট সাধারণত অস্ত্রোপচার করা হয় না।

সব কথার শেষ কথা, স্তনে যদি কোনো টিউমার থাকে, তাহলে সেটিকে উপেক্ষা বা অবহেলা করার কোনো উপায় নেই।

  • ডা. শরমিন সুমি, সহকারী অধ্যাপক, প্লাস্টিক সার্জারি, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট