শিশুটি কি অতিরিক্ত চিন্তাপ্রবণ?

অতিরিক্ত চিন্তা (ওভারথিঙ্কিং) এমন এক মানসিক প্রবণতা, যা কোনো শিশুর মানসিক বিকাশ, আত্মবিশ্বাস এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ককে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

অতিরিক্ত চিন্তা মানে কী?

অতিরিক্ত চিন্তা হলো একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে শিশু বা কিশোর বারবার একটি চিন্তাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ভাবতে থাকে। এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে উদ্বেগজনিত ব্যাধি, এমনকি অবসাদের লক্ষণও হয়ে উঠতে পারে। ছোট বয়সে এটি স্কুলফোবিয়া, ঘুমের সমস্যা বা আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে দেখা দেয়, আর বয়ঃসন্ধিতে এটি আত্মসম্মানবোধের অবনতি, একাকিত্ব কিংবা আত্মঘাতী ভাবনার মতো গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক।

১০ বছর বয়সী একটি শিশু, পরীক্ষার আগে রাতে ঘুমাতে পারে না, কারণ সে ভাবছে ‘আমি যদি ভুল করি?’

১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি কি যথেষ্ট ভালো দেখতে?’

অনেকেই বলে, ‘আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার’, ‘সব দোষ আমার’—এসব কথায় লুকিয়ে থাকে এক অনবরত অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম।

লক্ষণ যেগুলোর দিকে খেয়াল রাখা জরুরি

  • ঘন ঘন দুশ্চিন্তা বা ভয় পাওয়া।

  • সিদ্ধান্ত নিতে সময়ক্ষেপণ বা দ্বিধা।

  • অতিরিক্ত অপরাধবোধ বা আত্মনিন্দা।

  • ঘুম বা খাওয়ার অনিয়ম।

  • স্কুল/বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগে অনীহা।

  • মাথাব্যথা বা পেটব্যথার মতো অসুস্থতা, অতিরিক্ত হাত ঘামা, বুক ধড়ফড়, অকারণে দম আটকে আসার অনুভূতি বা শ্বাসকষ্ট—যেগুলোর কোনো শারীরিক ব্যাখ্যা নেই

কেন হয়?

  • পারিবারিক চাপ বা অপ্রত্যাশিত পারফরম্যান্স প্রত্যাশা।

  • বুলিং বা সামাজিক বঞ্চনা।

  • আত্মসম্মান ও আত্মপরিচয়ের দ্বন্দ্ব।

  • জিনগত প্রবণতা বা মানসিক স্বাস্থ্যের পারিবারিক ইতিহাস।

    করণীয়

  • শিশুর অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন। ‘ও তো ছোট’, এই ধারণা ত্যাগ করুন।

  • নিয়মিত তার সঙ্গে কথা বলুন, শুধুই পড়াশোনার বিষয়ে নয়—মনে কী চলছে, তা জানতে চান।

  • রুটিনে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, খেলা ও নির্ঝঞ্ঝাট সময় রাখুন।

  • প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি বা সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হতে দ্বিধা করবেন না।

আজকের শিশুদের মাথায় শুধু বইয়ের চাপ নয়, রয়েছে সামাজিক তুলনা, পারফরম্যান্সের চাপ, ভবিষ্যতের ভয় ও নিজের সঙ্গে দ্বন্দ্ব। অতিরিক্ত চিন্তা তাদের শুধু ক্লান্তই করে না, ধীরে ধীরে ভেঙেও ফেলে। অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব শুধু তাদের পড়া দেখিয়ে দেওয়া নয়, তাদের মনও বোঝা, অনুভব করা।

আপনার সন্তান যদি বেশি ভাবুক হয়, তাকে ‘দুর্বল’ ভাববেন না। তাকে বলুন, তোমার অনুভবগুলো স্বাভাবিক, আমি তোমার পাশে আছি। প্রয়োজনে সহায়তা নিন। মনে রাখা জরুরি, ‘চিন্তা’ তখনই উপকারী, যখন তা সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বে সহায়ক হয়, তা না হলে এই চিন্তাই একটা নিষ্পাপ মন আর জীবনযাপনকে গলা টিপে ধরে।