মুক্ত আলোচনা
দেশে কোটির বেশি মানুষ জানেনই না তাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
নভেম্বর ডায়াবেটিস সচেতনতা মাস। এ উপলক্ষে কংগ্রেসিয়া ও প্রথম আলোর আয়োজনে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত এক মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দেশের কয়েকজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘ডায়াবেটিস আমার, দায়িত্বও আমার’। সহযোগিতায় ছিল হেলদি লিভিং ট্রাস্ট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বারডেম একাডেমির পরিচালক (শিক্ষা) এবং ডায়াবেটিস মেলার উপদেষ্টা পরিষদ সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান। তাঁর বক্তব্যটি এখানে তুলে ধরা হলো।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই আমাদের দেশেও ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর সেই হারটা উন্নত দেশের চেয়ে আরও দ্রুত। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশের ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৮ লাখের মতো। অনুমান করা হচ্ছে, এভাবে বাড়লে ২০৩৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ বা আরও বেশি হতে পারে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির নিজস্ব পরিসংখ্যানমতে, ২৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্করা জানেন না তাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা যদি ১২ কোটি হয় তাহলে ৩ কোটির ওপর মানুষ জানেন না তাঁদের ডায়াবেটিস আছে। ডায়াবেটিসের পেছনে যতই জিনগত কারণ থাকুক না কেন, যদি পরিবেশ সহায় না হয়, তাহলে এই রোগের বহিঃপ্রকাশ কখনোই হয় না।
আমাদের আর্থসামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে, নগরায়ণ হচ্ছে। এর সঙ্গে সুস্থ জীবনযাত্রার যে উপাদানগুলো আছে, সেখান থেকে আমরা অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছি। স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবর্তন হয়ে এখন অস্বাস্থ্যকর খাবার চলে এসেছে। দ্রুত খাওয়া ও সময় বাঁচানোর জন্য ফাস্ট ফুডের মতো উচ্চ ক্যালরি ও উচ্চ ফ্যাটজাতীয় খাবারের দিকে ঝুঁকছি। বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরির সুযোগ কমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যে কায়িক পরিশ্রম দরকার, সেটিও আমরা ঠিকমতো করছি না। এ ছাড়া আমাদের মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন আসছে। এখন এআইয়ের যুগ। মানুষ বেশির ভাগ সময় ব্যয় করছে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে কাজে লাগানোর জন্য। দিনে আমরা প্রায় ১০–১৫ ঘণ্টা সময় কাটাচ্ছি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পেছনে। আমরা সব সময় চাপের মধ্যে থাকছি। এ ছাড়া আমাদের যে ৬–৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন, তা–ও আমরা পাচ্ছি না।
যাঁদের ডায়াবেটিসের বংশগত কারণ রয়েছে, কায়িক পরিশ্রম করেন না বা ওজন বাড়ছে, তাঁদের ডায়াবেটিস আছে কি না, তা দ্রুত নির্ণয় করতে হবে। আমাদের জানামতে, ৯২ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীর শর্করা নিয়ন্ত্রণে নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের কর্মজীবন ও কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যা অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। আজ আমাদের যে স্লোগানটি রয়েছে ‘ডায়াবেটিস আমার, দায়িত্বও আমার’, এটি কিন্তু আসলেই নিজের। যতই চিকিৎসক থাকুন না কেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিজেকেই সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিমাণমতো খেতে হবে, প্রতিদিন কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ ঠিকমতো খেতে হবে। রোগীকে ভাবতে হবে, তাঁর অন্য কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলো কি না। এমন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।