এই অভিনেত্রী ধরেই নিয়েছিলেন, তিনি আর মা হতে পারবেন না
মডেলিং ভালোই চলছিল। অভিনয়েও পাচ্ছিলেন সফলতা। এর মধ্যেই জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হন ২০২১ সালে। চিকিৎসকেরা বলেই দিয়েছিলেন, তাঁর মা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নেই বললেই চলে। কেবল ‘মিরাকল’ ঘটলেই সেটা সম্ভব। নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হতো। মার্চে হলো অস্ত্রোপচার। দুটি ওভারির দেড়টাই ফেলে দেওয়া হলো। যে অর্ধেকটা আছে, সেটিও এখন পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম)–এ আক্রান্ত!
মা হওয়ার বাসনায় বিয়েটাও সেরে ফেললেন তাড়াহুড়ায়, ২০২১–এর জুলাইয়ে। অস্ত্রোপচার আর বিয়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলায় স্নাতক পরীক্ষা দিলেন। জরায়ুতে আগে থেকেই সিস্ট ছিল। তারপর দেখা গেল, সেখানে জমে গেছে দেড় লিটার পানি। সেগুলো বের করার পর নতুন করে আরও নানা ধরনের জটিলতায় ভোগেন। বলছি তাসলিমা হোসেন নদীর কথা। মডেলিং ও বিনোদনের দুনিয়ায় নদী নামেই পরিচিত ‘ইন্টার্নশিপ’, ‘পেট কাটা ষ’খ্যাত এই অভিনেত্রী।
নদীর ভাষায়, ‘সন্তান জন্মদানের সঙ্গে জড়িত সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আমার নানান ধরনের জটিল সমস্যা। একটার সমাধান হয় তো নতুন করে আরও দুটি জটিলতার লক্ষণ দেখা দেয়। কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলছে। মনে করেন, শুটিংয়ে আছি। হঠাৎ করে রক্তের একটা রিপোর্ট খারাপ এল। দৌড়ালাম ডাক্তারের কাছে। ফলে অপারেশন, ওষুধ, পরীক্ষা–নিরীক্ষা, ইনজেকশন—এসবের চক্করে নিয়মিত কাজই করতে পারিনি।’
জরায়ু ক্যানসারের চিকিৎসা নিতে নদী ভারতে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন ২০২৩ সালে। তাঁরাও সাবধানে থাকতে বলেন। শারীরিক অসুস্থতায় মা হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে একরকম বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন।
সেবার ভারতে চিকিৎসার পর দেশে ফিরে কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পারেন, মা হতে চলেছেন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ওপেন স্পেস থিয়েটারের হয়ে একটা নাটকে গর্ভবতী মায়ের চরিত্রে অভিনয়ও করেন। ওই নাটকের ছয়টি শোতে অংশ নিয়েছেন তিনি। নদীর জীবনসঙ্গী সৈয়দ এজাজ আহমেদও এই থিয়েটারের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। থিয়েটারের মাধ্যমেই তাঁদের পরিচয় হয়েছিল।
১ এপ্রিল মা হয়েছেন তিনি। পুত্র এমীর সাঈদ মুসার বয়স সবে ৩ মাস ৪ দিন। নদীর নেই সহায়তা করার মতো কোনো মানুষ—মা, শাশুড়ি, বোন বা অন্য কেউ। জন্মের পর শিশুকে কোলে নিতেও ভয় লাগত নদীর। এ সময় অভিজ্ঞ কারও উপস্থিতি খুবই অনুভব করেছেন। কিন্তু তেমন কেউই ছিল না। কারণ, তাঁর মা ও শাশুড়ি কেউই ঢাকায় থাকেন না। তার ওপর তাঁদের বয়স হয়েছে। শিশুসন্তানকে দেখাশোনা করার মতো শক্তসমর্থ নন। ফলে একা হাতে সন্তান আর দুই বিড়াল সামলাচ্ছেন নদী। নদীর ভাষায়, ‘আমরা চারজনই বাসায় থাকি।’
সমান্তরালে চলছে ক্যানসার চিকিৎসাও। তবে এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন এই অভিনেত্রী। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ায় তা ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।
তরুণ এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমার হাজবেন্ড কর্পোরেট সেক্টরে চাকরি করেন। সকালে বের হন। ফেরেন রাতে। অফিসে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যতক্ষণ পারেন সন্তানকে সময় দেন, সামাল দেন। রোদে নিয়ে যান, ব্যায়াম করান, বাবুর সঙ্গে খেলা করেন।’
নদী দিনের কাজ সব সময় এগিয়ে রাখেন। পরদিন কী কী করবেন, সেই রুটিন তৈরি করেন আগের দিন। সময়মতো শিশুকে খাওয়ানো, গোসল করানো, রান্না করা, আবার বাবুকে ঘুম পাড়ানো, এর এক ফাঁকে নিজেও খেয়ে নেন। কখনো শিশুকে কোলে নিয়েই চলে নানা রকম কাজ। এখন বাবুকে স্ট্রলারে করে নিয়ে পার্কে ঘুরেও বেড়াচ্ছেন। এই রুটিনে এখন অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন নদী।
৫ ফুট সাড়ে ৮ ইঞ্চি উচ্চতার নদীর ওজন ছিল মাত্র ৫৬ কেজি। তবে সদ্য মা হওয়ার পর সেটা দাঁড়িয়েছে ৭৩–এ। সন্তান একটু বড় হলেই আবারও ফিট হয়ে কাজে ফিরবেন নদী। সেজন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন তো চলছেই। সময়ে, সুযোগে শরীরের যত্ন নিতেও ভুলছেন না।