নারীদের কোষ্ঠকাঠিন্য, কারণ ও প্রতিকার

বর্তমানে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগেন বলে গবেষণায় দেখা গেছে। কম আঁশযুক্ত খাবার ও পানি কম খেলে যেকোনো মানুষেরই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীর কোষ্ঠকাঠিন্যের হার প্রায় তিন গুণ বেশি লক্ষ করা যায়।

সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলত্যাগের সঙ্গে রক্তপাত, পাইলস, এনাল ফিসারের মতো জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

নারীরা কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশি আক্রান্ত হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ

● নারীদের মাসিকের সময়, গর্ভাবস্থায় কিংবা রজঃনিবৃত্তির (মেনোপজ) সময় শরীরের ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রায় স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন ঘটে, যা পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থার শেষের দিকে জরায়ু প্রসারিত হয়ে অন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খান।

● থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রায় ৮ গুণ বেশি। থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বা হাইপোথাইরয়েডিজম হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

● পুরুষদের চেয়ে নারীরা সাধারণত বেশি বিষণ্নতায় ভোগেন। এ কারণে পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক গতি কমে যাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

এ ছাড়া—

● খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবারের ঘাটতি ও অপর্যাপ্ত পানি পান এবং অলস জীবনযাপন করা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি বড় কারণ। 

● ডায়াবেটিস থেকে যখন বিভিন্ন স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন অটোনমিক নিউরোপ্যাথির জন্য পরিপাকতন্ত্রের চলন কমে যায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। 

● মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক), অস্ত্রোপচার বা কোনো রোগের কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা কঠিন হয়ে পড়ে। 

● কিছু ওষুধ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যালুমিনিয়ামসমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড; দীর্ঘদিন ধরে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। 

করণীয়

● পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন (প্রতিদিন ৮-১২ গ্লাস)। প্রতিদিন তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খান।

● খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে, সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খাবেন। চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড ও প্রসেসড ফুড পরিহার করা উচিত।

● পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম দরকার। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ও ঘুমানো (৬-৮ ঘণ্টা) উচিত। বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা পরিহার করুন। 

লক্ষণীয়

নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে: 

● পেটে তীব্র ব্যথা বা মলদ্বারে ব্যথা। মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। 

● হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া। রক্তশূন্যতা।

●পেটে কোনো লাম্প বা চাকা অনুভূত হলে।

ডা. ইসরাত জাবীন, সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন), গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা