কান্না নয়, তবু চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরে কেন

মস্তিষ্ক থেকে আবেগময় সাড়া পাওয়ার পর অশ্রুগ্রন্থি থেকে পানি নিঃসৃত হয়। তাই প্রবল আনন্দ বা দুঃখ—উভয় অবস্থায় চোখে পানি আসে। তবে চোখ থেকে পানি ঝরে রোগের কারণেও।

মস্তিষ্ক থেকে আবেগময় সাড়া পাওয়ার পর অশ্রুগ্রন্থি থেকে পানি নিঃসৃত হয়ছবি: পেক্সেলস

চোখকে ধুলাবালি ও ময়লা থেকে রক্ষা করে চোখের পানি। হঠাৎ চোখে কিছু পড়লে চোখ থেকে সেই ময়লা ধুয়ে দেওয়ার জন্য প্রচুর পানি নিঃসরিত হয়। চোখ শুষ্ক হয়ে গেলেও চোখ থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরতে পারে। চোখ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে বা প্রদাহ হলে চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরে, যাতে সংক্রামক অণুজীব, সেগুলোর টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ ধুয়ে যায়।

স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের চোখের মণির সামনে পাতলা স্বচ্ছ পানির একটি স্তর থাকে। এই পানির স্তর আমাদের চোখের মণি ভিজিয়ে রাখে ও স্বচ্ছ রাখতে সাহায্য করে। এই পানি প্রতি মিনিটে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে তৈরি হয়ে নিঃসৃত হয়; আবার নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হয়ে চোখ থেকে নিষ্কাশিত হয়।

নেত্রনালির মাধ্যমে চোখের পানি নিষ্কাশিত হয়ে নাকের মধ্য দিয়ে গলার ভেতরে চলে যায়। কিন্তু যদি কোনো কারণে এই নেত্রনালি সরু হয়ে যায় বা চোখের পানির প্রবাহপথ বন্ধ হয়ে যায়, তবে চোখ থেকে পানি ঠিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারে না।

তখন অনবরত চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ঘন ঘন জীবাণুর সংক্রমণ। এ অবস্থায় নেত্রনালি পরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখের পানিনিষ্কাশনের বিকল্প পথ তৈরি করে দেওয়া হয়।

চোখকে ধুলাবালি ও ময়লা থেকে রক্ষা করে চোখের পানি
ছবি: পেক্সেলেস

চোখের পানি ঝরার সমস্যা কি শুধু বড়দেরই হয়?

চোখের পানি ঝরার সমস্যা শিশুদেরও হতে পারে। অনেক সময় শিশুদের জন্মগতভাবে চোখের পানি পড়ার একধরনের সমস্যা হয়। কখনো কখনো দেখা যায়, জন্মের পর শিশুর এক চোখ বা দুই চোখই সব সময় ভেজা থাকে, মাঝেমধ্যে ময়লা জমে থাকে। একটু বড় হলে চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরতে থাকে। ঘন ঘন জীবাণুর সংক্রমণ হয়। এর কারণ কী?

এর কারণ, নেত্রনালির গঠনগত ত্রুটি। সাধারণত ভ্রূণ অবস্থায় শিশুদের নেত্রনালির গঠন শুরু হয়। গর্ভাবস্থার আট মাস সময়ে এটির গঠন সম্পন্ন হয়। তার আগে পর্যন্ত এটির শেষ অংশটি একটি পাতলা আবরণ দ্বারা বন্ধ থাকে।

জন্মের আগে এই শেষ অংশটি খুলে গিয়ে চোখের পানিনিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়; কিন্তু কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে এই পাতলা আবরণ জন্মের পরেও খুলতে দেরি করে। এমন অবস্থায় শিশুর চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরে, পিঁচুটি হয়।

তখন মা-বাবা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এ সমস্যার চিকিৎসা ধাপে ধাপে করা হয়, প্রথম ধাপে জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করা হয় ও চোখ পরিষ্কার রাখতে বলা হয়।

সেই সঙ্গে নবজাতকের মা-বাবাকে একধরনের চোখের ম্যাসাজ শিখিয়ে দেওয়া হয়। নিয়মিত ম্যাসাজের ফলে নেত্রনালির শেষ অংশের পথ খুলে গিয়ে স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে আসে। এই ম্যাসাজ নিয়মিত চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে ৬ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত করা যায়। এর পরও পানি পড়তে থাকলে শিশুর বয়স অনুযায়ী চিকিৎসার পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।

তবে ছোট শিশুদের চোখে পানি পড়া মানেই যে নেত্রনালির সমস্যা, তা নয়। তবে জন্মগত গ্লুকোমা রোগের একটি বিশেষ লক্ষণ—চোখ থেকে পানি পড়ার পাশাপাশি চোখ আকারে বড় হয়ে যাওয়া ও আলোর দিকে শিশুর তাকাতে না চাওয়া।
চোখ থেকে পানি ঝরার এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিতে হবে।

আরও পড়ুন