সন্তান সারা রাত ঘুমায় না!

শিশুদের ঘুমের চক্র সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত না হলে নানা জটিলতা আসতে পারে
ছবি: পেকজেলসডটকম

বাড়িতে নতুন শিশু আসা মানে অভ্যস্ত রুটিনে বিরাট পরিবর্তন। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আসে ঘুমের। সন্তানকে বারবার খাওয়ানো, ডায়াপার বদলানোর জন্য নতুন মাকে অনেকবারই রাতে উঠতে হয়। দিন ও রাতের পার্থক্য বোঝে না নবজাতক। তা ছাড়া শিশুর পেটব্যথার কান্না তো আছেই। আবার কোনো কোনো সন্তানের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা দিনে বেশি ঘুমায় আর সারা রাত জেগে থাকে। আর কিছু শিশু দিন–রাত সব সময়ই কম ঘুমায়। নতুন মায়ের জন্য এই ঘুমের শিডিউল–বিপর্যয় বেশ চ্যালেঞ্জিং। রাতে কম ঘুম হওয়ার কারণে মা নিজেও ক্লান্তি বোধ করেন, মনমেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাচ্চা সঠিক সময়ে পরিমিত পরিমাণে ঘুমায়, তাদের মনোযোগ, স্থিরতা, স্মৃতিশক্তি, খেলাধুলায় আগ্রহসহ সামগ্রিক সুস্থতাও বেশি থাকে। শিশুদের ঘুমের চক্র সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হলে তাদের শরীরের অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপও সঠিক ছন্দে থাকে।

সন্তানের নতুন বছরে সুন্দরভাবে স্কুল শুরু করার প্রথম শর্তই হলো স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস। না হলে দেখা যাবে, স্কুলে যাওয়ার আগে সন্তানের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে, স্কুল মিস হয়ে যাচ্ছে অথবা সন্তান স্কুলে গিয়ে ঘুম ঘুম ভাব থাকায় পাঠদানের সময় অমনোযোগী থাকছে।

দৈনিক প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণ বয়সভেদে ভিন্ন। সাধারণত টিনএজারদের চেয়ে ছোট শিশুদের দৈনিক ঘুমের পরিমাণ বেশি। ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা, ৬ থেকে ১৩ বছরের শিশুর ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা, টিনএজারদের ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার।

শিশুর ঘুম এবং জেগে ওঠার চক্র ঠিক করতে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলা যেতে পারে—

  • শিশু বর্তমানে যে রুটিনে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত, সেটা আগে লক্ষ করুন।

  • রাতে তাড়াতাড়ি শোয়া এবং সকালে তাড়াতাড়ি ওঠার অভ্যাস করাতে হবে।

  • প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জাগার অভ্যাস করতে হবে।

  • শোবার ঘর ঘুমানোর সময় শান্ত ও অন্ধকার থাকলে বাচ্চা ঘুমিয়ে আরাম পাবে।

  • বাচ্চার শোবার ঘরে টেলিভিশন, কম্পিউটার রাখা উচিত নয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইলেকট্রনিকস ডিভাইসগুলো বন্ধ হয়েছে কি না, তা দেখে নিতে হবে।

  • বাচ্চার স্ক্রিন টাইম কমিয়ে ফেলতে হবে। শুয়ে পড়ার পর ডিভাইসের স্ক্রিন দেখলে ঘুম আসতে দেরি হবে।

  • ক্ষুধার্ত অবস্থায় সন্তান ঘুমাবে না, তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগেই তার পেট ভরা আছে কি না, নিশ্চিত হতে হবে।

  • ঘুমাতে যাওয়ার আগে কফি ও কোক–জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত।

  • প্রতিদিন বিকেলে একটি নির্দিষ্ট সময় খেলাধুলার অভ্যাস করাতে হবে।

শিশুর ঘুমের অভ্যাস রাতারাতি ঠিক হয়ে যাবে না। পুরোপুরি সঠিক নিয়মে ঘুমের অভ্যাস তৈরি হতে ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এই নিয়মগুলো মেনে চললে তার দিন–রাতের ঘুমের চক্র স্বাস্থ্যকর রুটিনে আনা সম্ভব। এরপরও যদি সন্তানের ঘুমে অসুবিধা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর