দই-চিড়া কেন সেরা ইফতারি
ইফতারি মানেই যেন ভাজাপোড়া সব খাবারের আয়োজন। তবে এ ধরনের ইফতারি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়; বরং ইফতারে হালকা খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। সে হিসেবে অনেকে ইফতারে বেছে নেন দই-চিড়া। তবে কেন দই-চিড়া সেরা ইফতারি, জানেন কি?
দই-চিড়া থেকে আপনি পাবেন শর্করা। সারা দিন রোজা রাখার পর দেহে শক্তি জোগাতে এ শর্করা প্রয়োজন। দই প্রোবায়োটিক, তৈরি হয় দুধ থেকে। কাজেই দই থেকে আপনি পাবেন খানিকটা আমিষসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। ইফতারির এই সস্তা পদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান।
ক্যালরি কম, শক্তি বেশি
দই-চিড়া খেলে আপনি শক্তি পাবেন ঝটপট। তবে দারুণ ব্যাপার হলো, এতে ক্যালরির মাত্রা খুব বেশি নয়। আবার চিড়া খেলে যেহেতু সহজে ক্ষুধা পায় না, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও সহজ হয়। রোজা রেখাও যাঁদের ওজন কমে না, তাঁদের জন্যও দই-চিড়া সেরা ইফতারি।
হজমে উপকারী
আমাদের অন্ত্রে কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই বহু ব্যাকটেরিয়া বাস করে। এসব আমাদের পেটের সুস্থতার জন্য আবশ্যক। দই হলো প্রোবায়োটিক, অর্থাৎ এতে আছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া। তার মানে দই খেলে আপনার পেট ভালো থাকবে। সহজভাবে বলা যায়, দই আপনার পেট ঠান্ডা রাখবে। দই-চিড়া সহজপাচ্য খাবার তো বটেই, অন্যান্য খাবার হজমে সহায়তা করে, বদহজমেও উপকারী। দুধের তৈরি খাবার বলে দই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।
যদি খান লাল চিড়া
লাল চিড়ায় থাকা আঁশও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই আঁশের কারণেই দই-লাল চিড়া খাওয়ার পর চট করে আবার ক্ষুধা লাগে না। আঁশসমৃদ্ধ খাবার রক্তের খারাপ চর্বি কমাতে সাহায্য করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তের সুগার হুট করে বেড়ে যায় না; খাবার খাওয়ার কিছু সময় পর হুট করে তা কমেও যায় না। অর্থাৎ রক্তের সুগার ধীরে ধীরে বাড়িয়ে একটি স্বাস্থ্যকর মাত্রায় রাখার জন্য এ ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এটি যে কেবল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্যই ভালো, তা কিন্তু নয়; বরং সবার জন্যই স্বাস্থ্যকর। তবে সাদা চিড়ায় কিন্তু খুব বেশি আঁশ নেই। আঁশের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি পেতে হলে লাল চিড়া বেছে নিন।
দেহের ক্ষয়পূরণে সহায়তা
সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেহে যে ক্ষয় হয়, তা পূরণ করতে প্রয়োজন আমিষ। প্রথম শ্রেণির আমিষ, অর্থাৎ প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া আমিষ আমাদের দেহের ক্ষয়পূরণের জন্য খুবই জরুরি। তাই সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে দই-চিড়া খেলে দইয়ের আমিষ আপনার দেহের ক্ষয়পূরণ করতে সহায়তা করবে। ফলে রাতের অন্যান্য কাজের জন্য নিজেকে পূর্ণ উদ্যমে প্রস্তুত করে তোলাটা সহজ হবে।
আরও যা
দই-চিড়ার মতো একটি পুষ্টিকর খাবার খেলে ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমবে। এতে আপনি সুস্থ থাকবেন। তবে দই–চিড়ায় চিনি বা গুড় যোগ করবেন না। চিড়া ভেজানোর সময় কেবল সামান্য লবণ যোগ করলেই আপনার আর দই-চিড়া খেতে পানসে লাগবে না। ফলে তাতে চিনি বা গুড় যোগ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভবও করবেন না। এ ছাড়া দই-চিড়ার সঙ্গে কলা বা অন্যান্য ফল যোগ করলে তা থেকে আপনি সেসব ফলের পুষ্টি পাবেন, স্বাদ বাড়বে। দই-চিড়া তৈরি করা খুবই সহজ। চুলা ধরানোর ঝামেলাই নেই। অফিসে ইফতার করতে হলেও অনায়াসে এর ব্যবস্থা করতে পারবেন।