শিশুর ঠান্ডা-সর্দিতে নাজাল স্প্রে বা ড্রপ ব্যবহারে ক্ষতির আশঙ্কা কত?

শীতে শিশুদের বিশেষ করে এক বছরের নিচের শিশুদের ঠান্ডা লেগে নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়া, সর্দি ইত্যাদি হয়। এ ধরনের সংক্রমণ বছরে ছয় থেকে আটবার হতে পারে। কয়েক দিনের মাথায় আপনা-আপনি সেরে যায়।

শিশুর ঠান্ডা-সর্দিতে বন্ধ নাক খুলে দিতে অহরহ নাকে নানা ড্রপ ও স্প্রে ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা বলছে, এগুলোতে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • ড্রপ ও স্প্রে ব্যবহারে শিশুর অত্যধিক ঝিমুনি, পেটের সমস্যা, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, খিঁচুনি, যন্ত্রণা ভাব, অস্বস্তি ভাব বা নাকের ভেতরের শুষ্কতা, মাথাব্যথা প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।

  • নাম ও প্যাকেট দেখতে একই হলেও ছোট–বড়দের ক্ষেত্রে এসব ড্রপে মাত্রার ভিন্নতা রয়েছে। অনেক সময়ই অসাবধানতাবশত বড়দের ড্রপ ছোটদের দেওয়া হয়।

  • নাকের ড্রপের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে যেকোনো কফের সিরাপ ও অ্যান্টিহিস্টামিন–জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো ক্ষতিকর।

নাজাল ড্রপস

এটি আইসোটোনিক দ্রবণ, যা নাকের ভেতরে শক্ত মিউকাস পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, সাইনাস ইনফেকসন ও বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডাজনিত সমস্যায় নাক পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়।

অক্সিমেটাজোলিন নাজাল ড্রপস

০.০৫% নাজাল ড্রপস ও ০.০২৫% শিশুদের নাজাল ড্রপস। দুই থেকে তিন ফোটা করে দিনে দুবার নাকের ভেতরে দিতে হবে। তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি চিকিৎসা নয়। কোনো অবস্থাতেই দুই সপ্তাহের বেশি চিকিৎসা চালানো ঠিক নয়।

নাজাল স্প্রে

শিশুদের অ্যালার্জির সমস্যা হলে হাঁচি ও নাক বন্ধের সমস্যা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত আরাম পেতে অনেকে নাজাল স্প্রে ব্যবহার করুন। বাষ্প নিলেও বন্ধ নাক খুলে যায়। কিন্তু তাতে সময় লাগে। স্প্রে বারবার ব্যবহার করলে ভেতরের ত্বক শুষ্ক হয়ে রক্ত বের হওয়া, মাথাব্যথা ও নাক ফুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে আসক্তি তৈরি হয়, যা নাক ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

অভিভাবকদের প্রতি

  • নবজাতকের নাসারন্ধ্র ছোট, সোজা। সামান্যতেই জ্যাম লাগে, আবার নিজে নিজে ঠিক হয়। নবজাতক ও ছোট্ট শিশুর এ ধরনের সমস্যায় ওষুধের চেয়ে যত্নআত্তিতেই জোর দেওয়া হয়।

  • সর্দি হলে গরম কাপড় দিয়ে নাক পরিষ্কার করা যায়। সর্দি ঘন, শুকনা বা শক্ত হলে শিশুর নাকে কয়েক ফোটা লবণমিশ্রিত পানি দিলে সর্দি নরম হয়। আধা কাপ কুসুম গরম পানিতে চা-চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ লবণ গুলে স্যালাইন ড্রপ বানানো যায়। কটন বাড নাকে ঢোকানো যাবে না।

  • তরল খাবার বাড়াতে হবে। বুকের দুধ, পরিষ্কার পানি, দুধ বা ফলের রস দেওয়া যেতে পারে। এগুলো নাকের সর্দি নরম রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। শিশুকে চিনি মেশানো চা, লেবু-পানির শরবত অথবা মধু খাওয়ানো যায়।

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী: সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল