অফিসে কাজ করতে করতেই কেউ মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, কেউ বা হাসপাতালে নিতে নিতেই মারা যায়। কেন এমন হয়?ছবি: সংগৃহীত

সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ। অসুস্থতার বাহ্যিক কোনো লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ মারা গেলেন। এমনটা আমরা প্রায়ই ঘটতে দেখি। অফিসে কাজ করতে করতেই কেউ মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, কেউ বা হাসপাতালে নিতে নিতেই মারা যায়। কেন এমন হয়?
এ রকম আকস্মিক মৃত্যু যেকোনো বয়সে হতে পারে। এমনকি অনেক সময় চিকিৎসকেরাও ঠিক বুঝতে পারেন না, কীভাবে তার মৃত্যু ঘটেছে। বুঝতে হলে অনেক সময় ময়নাতদন্ত দরকার হতে পারে।

বর্তমানে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। অল্প বয়সীদের মধ্যে বাড়ছে সাডেন অ্যাডাল্ট ডেথ সিনড্রোম বা সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের প্রবণতা।

সাধারণত ৪০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যু ঘটলে সাডেন অ্যাডাল্ট ডেথ সিনড্রোম টার্মটি ব্যবহার করা হয়, ময়নাতদন্তেও যখন মৃত্যুর কারণ জানা যায় না।


কারা ঝুঁকিতে আছেন

সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ মধ্যবয়স্ক ও বয়স্কদের হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই হৃদ্‌রোগের ইতিহাস আছে, তাদের আশঙ্কা বেশি। যুবকদের মধ্যেও এ রকম হতে পারে, যেমন যাদের পারিবারিক ইতিহাস বা পরিবারের সদস্যের হঠাৎ মৃত্যু, ব্যায়ামের সময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা খিঁচুনি বা অজ্ঞান হওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের এ রকম হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা ছাড়াই হঠাৎ হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

লক্ষণগুলো কী কী

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই ঘটতে পারে এ রকম মৃত্যু।
আবার সতর্কীকরণ চিহ্ন দেখা দিলেও বেশির ভাগ মানুষই তা সাধারণ লক্ষণ ভেবে ভুল করেন বা চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করেন।

আকস্মিক কার্ডিয়াক মৃত্যুর পূর্ব লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে মূর্ছা যাওয়া (সিনকোপ), শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা, হঠাৎ করে প্রচণ্ড বুক ধড়ফড়।

কারণ কী

  • হৃৎপিণ্ডে ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংকেত থেকে হৃৎপিণ্ডে অনিয়মিত ছন্দ হঠাৎ কার্ডিয়াক মৃত্যুর জন্য দায়ী। খুব দ্রুত হৃৎস্পন্দনের সময়, হৃৎপিণ্ডের নিচের প্রকোষ্ঠগুলো (ভেন্ট্রিকল) রক্ত পাম্প করার পরিবর্তে অকেজোভাবে কাঁপতে থাকে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে।

  • হৃৎপিণ্ডে জন্মগত কিছু ত্রুটি, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক ছন্দগত ত্রুটি থেকেও এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে।

  • হার্টঅ্যাটাক থেকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে অল্প সময়ে মৃত্যু হতে পারে।

  • হার্টের অন্যান্য সমস্যা, যেমন হার্টের মাংসপেশির জন্মগত ত্রুটি, মাংসপেশির প্রদাহ, হার্টের  প্রকোষ্ঠের (চেম্বার) কিছু রোগ বা হার্টের ভালভের রোগ থেকেও এ রকম হতে পারে।

  • ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধে বা ফুসফুসের পর্দায় বাতাস জমেও এ রকম মৃত্যুর ঘটনা দেখা যায়।

এসব কারণে বিশেষজ্ঞরা ৪০ বছরের কম বয়সীদের নিয়মিত হৃদ্‌যন্ত্র পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন। ফিট ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা সত্ত্বেও এ ধরনের মৃত্যু ঘটতে পারে যে কারও।

অনেক সময় এ রকম মৃত্যু ঘটলে রোগীর স্বজনেরা চিকিৎসাব্যবস্থা বা চিকিৎসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য দায়ী করেন। কিন্তু তাঁদেরও মাথায় রাখতে হবে যে এ রকম মৃত্যু যেকোনো বয়সে, যেকোনো সময়ে হতে পারে, যেখানে চিকিৎসকদের কিছু করার থাকে না বা কিছু করার আগেই মৃত্যু হয়ে যায়।

ডা. সাইফ হোসেন খান: মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঢাকা