প্রতিদিন কলা খেলে শরীরে কী হয়
কলা হজমশক্তি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণ, শক্তি বৃদ্ধি, হৃৎপিণ্ডের সুস্থতাসহ নানা উপকার করে। এমন উপকারী ফল প্রতিদিন খেলে দেহে কী কী পরিবর্তন ঘটে?
দেহের শক্তি বাড়ায়
খেয়াল করে দেখবেন, খেলোয়াড়েরা খেলার বিরতিতে কলা খান। কারণ, কলায় আছে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট আর ভিটামিন বি। আমাদের শরীরের প্রধান জ্বালানি হলো এই কার্বোহাইড্রেট। ফলে কলা খেলে দেহে বাড়তি শক্তি পাওয়া যায়।
তবে শুধু কলা খেলেই চলবে না। এর সঙ্গে খেতে হবে প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর চর্বি। তাহলে শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে। তা না হলে রক্তে সুগারের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে গিয়ে আবার কমে যেতে পারে। এতে আগের চেয়েও দুর্বল লাগতে পারে।
হজমশক্তি ভালো করে
হজম সমস্যায় কলার মতো উপকারী ফল খুঁজে পাওয়া কঠিন। কলায় আছে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ। এই ফাইবার হজমপ্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফাইবার খাবারকে পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে সহজে চলাচল করতে সাহায্য করে। এতে মল নরম হয় এবং পেট পরিষ্কার হয় সহজে।
এ ছাড়া কলায় আছে প্রিবায়োটিকস। এসব হজমতন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। তাই তো চিকিৎসকেরা বমি, পেট খারাপ কিংবা অস্ত্রোপচারের পর রোগীদের কলা খেতে বলেন।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
কলা খেলে হুট করে রক্তে শর্করা বেড়ে যায় না। কারণ, কলায় যে ফাইবার আছে, তা শরীর পুরোপুরি ভাঙতে পারে না। তাই শর্করা ধীরে ধীরে রক্তে মেশে।
কলায় দুই ধরনের ফাইবার আছে—দ্রবণীয় ফাইবার আর রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ। এই দুইয়ে মিলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট বাড়ায়
সব ফলেই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে। কলাও তার ব্যতিক্রম নয়। অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কারণে দেহের কোষ কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর কারণেই বয়সের ছাপ বোঝা যায় না এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকিও কমে।
প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, কলা প্যানকিয়াট্রিক বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার এবং ট্রিপল-নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
কলায় আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি আর ম্যাগনেশিয়ামের মতো জরুরি উপাদান। এসব দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। শরীরে এসবের ঘাটতি হলে নানা রোগ দেহে সহজেই আক্রান্ত করে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পেট ভালো থাকলে সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও ভালো থাকে।
খেলাধুলায় ভালো করা যায়
খেলোয়াড়দের কাছে কলা খুব জনপ্রিয় ফল। কারণ, এতে আছে দুই দারুণ খনিজ—ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম। এসব শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করে, ব্যায়ামের সময় ঘামের সাহায্যে যে খনিজ বেরিয়ে যায়, তা পূরণ করে।
আবার পেশির টান বা ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। গবেষণায় এমনও দেখা গেছে, ব্যায়ামের আগে পানি আর একটা কলা খেলেই নাকি স্পোর্টস ড্রিঙ্কের মতো কাজ করতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
একটা মাঝারি আকারের কলায় খুব বেশি ক্যালরি থাকে না। অথচ আঁশ আর রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চে বেশি থাকার কারণে পেট ভরা ভরা লাগে। এতে ক্ষুধা কম লাগে। ফলে অকারণে খাওয়ার প্রবণতাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে নিয়মিত কলা খাওয়া যেতে পারে।
ঘুম ভালো হয়
কলা খেলে ঘুমও ভালো হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় বা রাতের খাবারের আগে খেলে। কলায় থাকা ম্যাগনেশিয়াম পেশিকে শিথিল করে আর ঘুমের ছন্দ ঠিক রাখে। যদিও কলা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজে আসবে না, কিন্তু নিয়মিত খেলে ঘুমের মান উন্নত হয় এবং সময়মতো ঘুম আসে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দারুণ কাজ করে। একটা মাঝারি আকারের কলায় পটাশিয়ামের দৈনিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন কলা খেলে রক্তচাপ কিছুটা হলেও কমতে পারে। পাশাপাশি কমবে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে
দীর্ঘ ২০ বছরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ফল খাওয়া মানুষদের মধ্যে হতাশা বা বিষণ্নতা তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে কলার মতো ফলে আছে ট্রিপটোফ্যান নামে একধরনের উপাদান, যা শরীরে গিয়ে সেরোটোনিনে রূপ নেয়। সেরোটোনিন হলো মন ভালো থাকার রাসায়নিক।
সূত্র: ভেরি ওয়েল হেলথ