অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ডেঙ্গু হলে

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ডেঙ্গু জ্বর হলে তা মা ও অনাগত শিশুর জন্য বিশেষ ঝুঁকি বয়ে আনে। গর্ভকালে যেকোনো পর্যায়ে ডেঙ্গু হলে তা মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এরা ক্যাটাগরি ‘বি’তে পড়ে। এর অর্থ হলো তাদের জন্য বিশেষ ও আলাদা ব্যবস্থা লাগবে।

ডেঙ্গু ভাইরাস মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যেতে পারে। বিশেষ করে গর্ভের শেষ দিকে এবং সন্তান প্রসবের সময় মা আক্রান্ত থাকলে এই সমস্যা বেশি হয়। ফলে শিশুও আক্রান্ত হয়। আর গর্ভের প্রথম দিকে হলে ডেঙ্গু হলে অগ্রিম গর্ভপাত হতে পারে। আবার শেষের দিকে হলে অ্যান্টিপারটাল এবং পোস্টপারটাল রক্তপাত বেশি হতে পারে।

মায়ের একলাম্পসিয়া ও প্রিএকলাম্পসিয়াও হতে পারে। এ ছাড়া ডেঙ্গুর প্রভাবে মায়ের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লিভার ও কিডনি অকার্যকর বা শ্বাসের মারাত্মক রোগ রেসপিরেটরি অকার্যকর হয়ে যাওয়া, এআরডিএস হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। সব মিলিয়ে ডেঙ্গুর কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মৃত্যুহার অন্যদের তুলনায় বেশি।

মাতৃগর্ভে রক্তক্ষরণ হলে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমবে। ফলে শিশুর পুষ্টি কমে যাবে। এর ফলে সন্তান গর্ভে মারা যেতে পারে। বয়স অনুযায়ী আকারে ছোট বা জন্মের সময়ে কম ওজন হতে পারে।

ডেঙ্গুর জন্য অন্তঃসত্ত্বা মায়ের চিকিৎসা অন্য যেকোনো সাধারণ মানুষের মতোই। ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুতে পরিপূর্ণ বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি এবং প্যারাসিটামলই চিকিৎসা। হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ লাগবে। সুযোগ থাকলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সব মাকেই হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। মেডিসিন, গাইনি ও দরকারমতো অন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি টিমের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।

মায়ের পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি ও গর্ভস্থ শিশুর সার্বিক অবস্থা নিরূপণ করে নিতে হবে। রুটিন রক্ত পরীক্ষা (হিমোগ্লোবিন, হিমোটোক্রিট, এসজিপিটি প্লাটিলেট, পিসিভি) করতে হবে। বাড়তি থাকলে বারবার গুরুতর ডেঙ্গুর উপসর্গ বা ওয়ার্নিং সাইন দেখা দিচ্ছে নাকি তা লক্ষ রাখতে হবে।

রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজন পুরো ব্যাপারটা নিয়ে প্রথম দিন থেকেই সতর্ক থাকবেন। কারণ যেকোনো সময় বিপদ ঘটতে পারে। ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে লেবার, সিজার বা অন্য কোনো ইন্টারভেনশন না করে সামান্য দেরি করাই ভালো ডেঙ্গু শক এড়ানোর জন্য।

সন্তান প্রসব বা ডেলিভারির সময় রিটেইনড প্লাসেন্টা ও পিপিএইচ বা প্রসব–পরবর্তী রক্তক্ষরণ সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। ডিআইসি ও শক সিনড্রোম হওয়ার ঝুঁকি অনেক। ডেঙ্গুর জন্য মায়ের গর্ভপাত বা অগ্রিম ডেলিভারি করানোর কোনো দরকার নেই।

এ সময় যাঁরা মা হচ্ছেন, তাঁরা বিশেষভাবে সতর্ক থাকবেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য মশার কামড় ঠেকাতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য উপযোগী ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা চলছে। মায়ের দুধে ডেঙ্গু ছড়ায় না, তাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মা নিরাপদে সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।

  • অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমুদ্দিন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ