ফুসফুসের ক্যানসার নাকি যক্ষ্মা

ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতার মাস নভেম্বর। সারা বিশ্বে পুরুষদের ক্যানসারে মৃত্যুর এক নম্বর কারণ ফুসফুস ক্যানসার। শতকরা ৮০ ভাগ ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত হয় দেরিতে—তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে, যখন নিরাময় প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণের সঙ্গে অন্য অনেক রোগের লক্ষণের মিল থাকায় প্রথমে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আরেকটি বড় সমস্যা হলো ফুসফুস ক্যানসার অনেক সময় যক্ষ্মা হিসেবে উপস্থাপিত হয়ে ভুল পথে চিকিৎসার আশঙ্কা তৈরি করে। তবে লক্ষণ এবং পরীক্ষা–নিরীক্ষায় যক্ষ্মা ও ক্যানসার পৃথক করা যায়।

যক্ষ্মা বনাম ফুসফুস ক্যানসার

  • যক্ষ্মা যেকোনো বয়সে হতে পারে, ক্যানসার সাধারণত বেশি বয়সে হয়।

  • যক্ষ্মায় ধূমপানের ইতিহাস না–ও থাকতে পারে, ক্যানসারে ৮০-৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে ধূমপানের ইতিহাস থাকে।

  • যক্ষ্মার ক্ষেত্রে রোগীর সন্ধ্যাকালীন জ্বর থাকে, যা ক্যানসারে দেখা যায় না।

  • যক্ষ্মায় রোগীর ওজন কমে ধীরে, ক্যানসারে বেশ দ্রুত।

  • যক্ষ্মায় সাধারণত বুকে ব্যথা হয় না, ক্যানসারে তীব্র ব্যথা হতে পারে।

  • যক্ষ্মায় প্রথম দিকেই কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে, ক্যানসারে এ লক্ষণ বেশ দেরিতে আসে।

পরীক্ষা

  • বুকের এক্স–রে দেখে চিকিৎসক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যক্ষ্মা নাকি ক্যানসার, তার ধারণা পান। তবে সন্দেহ হলে সিটি স্ক্যান ও ব্রোঙ্কোসকোপির মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্ত করা যায়।

  • যক্ষ্মা যেহেতু জীবাণুঘটিত রোগ, তাই কাশিতে এর জীবাণু শনাক্ত করা যায়। ক্যানসার নিশ্চিত করতে এফএনএসি বা কোর বায়োপসির প্রয়োজন হতে পারে।

  • বুকে পানি জমলে তার ধরন দেখে ও তাতে ক্যানসার কোষের উপস্থিতি দেখেও ক্যানসার নিশ্চিত করা যায়।

ফুসফুস ক্যানসারের কারণ

  • ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ ধূমপান। যাঁরা দৈনিক ২০টির বেশি সিগারেট খান, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২০ গুণ বেশি। ধূমপায়ীর আশপাশের অধূমপায়ীও (প্যাসিভ স্মোকার) ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন।

  • অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, অ্যাসবেসটস, র‌্যাডন প্রভৃতি পদার্থের অনিয়ন্ত্রিত সংস্পর্শ ও বায়ুদূষণ।

  • ফুসফুসের যে স্থানে যক্ষ্মা হয়, নিরাময়ের পর একই স্থানে ক্যানসার হওয়ারও ঝুঁকি থাকে।

  • ফুসফুস ক্যানসারের অন্যতম কারণ কাঠের চুলার ধোঁয়া ও রান্নার তেলের বাষ্প নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ।

করণীয়

  • ধূমপান ছাড়তেই হবে। মাস্ক ব্যবহারে বায়ুদূষণ থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া সম্ভব। কারখানার কর্মীরা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মেনে চলবেন। রান্নার ধোঁয়া প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী কাশি বা ওজন হ্রাস, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, রক্তমিশ্রিত কাশি দেখা গেলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো জরুরি।

  • যক্ষ্মার জীবাণু শনাক্ত করেই ওষুধ শুরু করা উচিত। বুকে পানি জমলেই যক্ষ্মা ধরে নেওয়া উচিত নয়। ক্যানসারের সন্দেহ দূর করতে পরীক্ষা করাতে হবে। যক্ষ্মা সেরে যাওয়ার পরও নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।

ডা. আ ন ম মঈনুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, রেডিওথেরাপি বিভাগ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল