কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়গুলো কী

কেমোথেরাপি শেষ হয়ে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আবার স্বাভাবিক চুল ওঠা শুরু হয়ছবি: পেক্সেলস

কেমোথেরাপির যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, তার মধ্যে চুল পড়ে যাওয়া, বমি ভাব বা বমি হওয়া, পাতলা পায়খানা, খাবারে অরুচি, চামড়া বা নখের রং পরিবর্তন, মুখে ঘা, বিষণ্নতা সবচেয়ে পরিচিত। কেমোথেরাপির জন্য চুল পড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। সব ধরনের কেমোথেরাপিতে এমন হয় না, তবে কেমোথেরাপির ধরন অনুযায়ী কমবেশি হয়ে থাকে। কেমোথেরাপির জন্য চুল পড়ে যাওয়া রোধের আদতে কোনো উপায় নেই। কেমোথেরাপি শেষ হয়ে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আবার স্বাভাবিক চুল ওঠা শুরু হয়। তাই এ নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই।

আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে কেমোথেরাপি প্রয়োগে বমি ভাব বা ডায়রিয়ার প্রবণতা অনেক কমে এসেছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বমি ভাব হতে পারে এবং অল্পবিস্তর পাতলা পায়খানা হতে পারে, যা শরীরে ক্যানসারের স্থানের ওপর নির্ভর করে। অনেকের খাদ্যনালির ক্যানসারের জন্যও বমি ভাব বা পাতলা পায়খানা হয়। যদি কারও বমি ভাব বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে আধুনিক ওষুধ প্রয়োগ করে তার প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্ভব। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বমি বা পাতলা পায়খানা হলে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

কেমোথেরাপির জন্য খাবারে অরুচিও হয়। তবে তা বিভিন্ন ওষুধ সেবনের মাধ্যমে প্রতিরোধ ও প্রতিকারযোগ্য। কিছু কিছু কেমোথেরাপিতে হাত ও পায়ের তালুর চামড়ার পরিবর্তন হয়। যেমন চামড়া উঠে যাওয়া, ব্যথা, ঘা হওয়া, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে রক্ত পড়তে পারে। অনেকের শরীরে নানা স্থানে নীলাভ দাগ হতে পারে এবং নখ কালো হয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে একদমই ঘাবড়ানোর কারণ নেই।

হাত–পায়ের তালুতে এসব পরিবর্তন হলে সেটাকে হ্যান্ড-ফুট সিনড্রোম বলে। এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে। ওষুধের পাশাপাশি রোগীদের মধ্যে সচেতনতা জরুরি। যেমন হাত–পায়ের তালুর যত্ন নেওয়া, ঘষামাজা না করা, হাত–পায়ের তালু কোমল বা নরম রাখা, নরম স্যান্ডেল ব্যবহার করা ইত্যাদি। এসব নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব সহজ।

মুখের যত্ন কেমোথেরাপি নেওয়া রোগীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে যথার্থ নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লসিং করা, মাউথওয়াশ ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই মুখের ঘা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এরপরও মুখে ঘা হলে ক্যানসার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

ক্যানসারের রোগীরা স্বাভাবিকভাবেই বিষণ্নতায় ভোগেন। বিষণ্নতা প্রতিরোধে একজন ক্যানসার রোগীর পারিবারিক ও সামাজিক—দুই ক্ষেত্রের সাহায্য প্রয়োজন। ক্যানসার রোগীকে নিয়মের মধ্যে রেখে স্বাভাবিক কাজ করতে দিন, বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন। বিষণ্নতা পরিলক্ষিত হলে একজন মনোবিদ ও মনোচিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা দিন।

মনে রাখবেন, অন্য সব চিকিৎসার মতো ক্যানসারের চিকিৎসাও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঊর্ধ্বে নয়। শুধু সচেতনতা বাড়ানো, সদিচ্ছা ও সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের মাধ্যমে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্ভব।

ডা. মাহফুজুল রিয়াদ: সহকারী অধ্যাপক, ক্যানসার বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাভার