নবজাতকের চোখে পানি ঝরে কেন

শিশুদের গ্লুকোমা বা কর্নিয়াতে ঘা, চোখ ওঠা, আঘাত কিংবা অ্যালার্জির কারণে চোখে প্রচুর পানি আসতে পারে
ছবি: অনির্বান

আমরা সাধারণত জানি বেশি বয়স হলে চোখ থেকে পানি পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু একটি নবজাতক বা ছোট্ট শিশুর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরা, পিঁচুটি বা কেতর আটকে থাকা, লাল হয়ে চোখ ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে চিন্তিত হওয়ারই কথা।

আমাদের চোখের কোণে হাড়ের সঙ্গে লাগোয়া ‘ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি’তে পানি তৈরি হয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে আমাদের চোখের পাতায় এসে প্রতিবার পলক ফেলার সঙ্গে সঙ্গে চোখকে ভিজিয়ে দেয়। পানির একটা অংশ চোখের ভেতর কোনার নিচে—পাপড়ির একটা ছোট্ট ছিদ্রপথ ধরে বিশেষ ব্যবস্থায় নেত্রথলিতে এসে নাকের ভেতরে পৌঁছায়।

যদি কোনো কারণে এই পথ বন্ধ থাকে বা সংকীর্ণ থাকে বা সচল হতে দেরি হয় (যা নবজাতক বা শিশুদের বেলায় হয়), তখন চোখে পানি জমে যায়। নাকে পানির গতিপথ রুদ্ধ হয়ে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ শিশুর বেলায় এমনটা হয়।

যেহেতু চোখে পানি জমে থাকে, এই পানি বাইরের বাতাসের সঙ্গে জীবাণু সংক্রামিত হলে পিঁচুটি হয় বা লাল হয়। না জেনে সঠিক চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে অনেক রোগী অপচিকিৎসার শিকার হন। অনেকে একে বাতাস লেগেছে, বুকের দুধ চোখে গিয়েছে, আঁতুড় মানা হচ্ছে না, ইত্যাদি কুসংস্কারের কথা বলেন।

এমন হলে কী করবেন

ভয়ের কিছু নেই। বন্ধ নেত্রপথ সময়ের ব্যবধানে চালু হয়ে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে শিশুর বয়স ৯ থেকে ১০ মাস বয়স হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। রোগের ধরন অনুযায়ী চক্ষুবিশেষজ্ঞ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে বলেন। চোখের ভেতরের কোণ যত্নসহকারে ম্যাসাজ করতে হবে। সঙ্গে নাকের ভেতর পরিষ্কার রাখতে হবে।

এ ছাড়া শিশুদের গ্লুকোমা বা কর্নিয়াতে ঘা, চোখ ওঠা, আঘাত কিংবা অ্যালার্জির কারণে চোখে প্রচুর পানি আসতে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব সাময়িক। সঠিক চিকিৎসা, উন্নত জীবনযাত্রা ও স্বাস্থ্যসচেতনতায় এসব সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

লেখক: চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও ফেকো সার্জন কনসালট্যান্ট, যশোর চক্ষু ক্লিনিক