নবজাতকের ত্বকের একটি অসুখ হলো ‘মাসিপিসি রোগ’। মুরব্বিরা রোগটিকে এ নামেই ডেকে থাকেন। কেন এ আজব নাম, জানা যায় না। তবে ডাক্তারি পরিভাষায় এ অসুখের নাম ‘ইরিথেমা টক্সিকাম’। এটা নিতান্ত নিরীহ রোগ, যা আপনা-আপনি সেরে যায়। তবে কেউ কেউ ঘাবড়েও যান বটে।
এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো র্যাশ। পূর্ণ গর্ভকাল পাওয়া নবজাতকের প্রায় ৫০ শতাংশের এ রোগ দেখা যায়। অকালজাত (প্রি–টার্ম) নবজাতকের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে এটি কম ঘটে থাকে।
লক্ষণ
ত্বকে হলুদ-সাদা বর্ণের এক থেকে দুই মিলিমিটার আকারের শক্ত দানা বা পুঁজ দেখা যায়, যার চারপাশে থাকে লাল–লাল ছোপযুক্ত র্যাশ। কখনো–বা শুধু লালচে আভা নিয়ে র্যাশের আবির্ভাব। এ ধরনের কয়েকটা র্যাশ ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় পাওয়া যায়। দেহের বিভিন্ন স্থানে, যেমন— চোখের পাতায়, কপালে জড়ো জড়ো অবস্থায় দেখা দিতে পারে।
দিনে দিনে এ র্যাশের রূপ পরিবর্তিত হয় এবং কয়েক দিন পর একেবারে চলে যায়। তবে হাত ও পায়ের তালুতে লক্ষণীয়ভাবে অনুপস্থিত থাকে।
রোগটি উচ্চ হারে প্রকাশ পায় নবজাতকের দুই দিন বয়সে। কিন্তু প্রথম কয়েক দিন বয়সে তা দেখা দিয়ে মিলিয়ে যেতে পারে। প্রি–ম্যাচিউর নবজাতক শিশুর এই র্যাশ কিছুটা দেরি করে বেশ কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ বয়সে উদয় হয়।
কারণ ও পরীক্ষা–নিরীক্ষা
এ রোগের নির্দিষ্ট কারণ অজানা। তবে এ ধরনের র্যাশ নবজাতকের ত্বকের নানা অসুখ, যেমন ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের সংক্রমণ, ক্যানডিডা–জাতীয় ছত্রাকের সংক্রমণ, হারপেস সিমপ্লেক্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে। কাজেই কোনো কোনো সময় ক্লিনিক্যালি ও ল্যাব পরীক্ষার সাহায্যে এসবের পার্থক্য নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে ত্বকের পরীক্ষা কার্যকর।
‘ইরিথেমা টক্সিকাম’ অসুখে ‘রাইট স্টেইন’ পরীক্ষায় ইওসিনোফিল মেলে এবং সেখানে কোনো অণুজীবাণু থাকে না।
এ অসুখের সময়কাল সংক্ষিপ্ত। তিন থেকে সাত দিনের মতো। সাধারণভাবে ত্বকে কোনো দাগ ছাড়া শিশু সেরে ওঠে। এ কারণে এই অসুখে কোনো ওষুধ বা চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল